গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি ধরনের খাবার খেতে হবে? গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা

গ্যাস্ট্রিক রুগীরা সব ধরনের খাবার খেতে পারে না। কারণ কিছু কিছু খাবারের গ্যাসের মাত্রা বেড়ে গেলে রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। গ্যাস্ট্রিকে তৈরি হওয়া আলসার যাদের রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই খাদ্য তালিকা প্রস্তুত করে খাবার খাওয়া উচিত। কেননা এই আনসার থেকেই তৈরি হয় ক্যান্সারের। তাই যাদের গ্যাস্ট্রিক থেকে আলসার হয়েছে তাদেরকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাদ্য তার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে হবে।

পেটের আলসার একটি জটিল সমস্যা। এই সমস্যায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ ভুগছেন। তাই প্রায়ই দেখা যায় গুগলে অনেকেই সার্চ করে থাকেন গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত। বন্ধুরা আমি আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চেষ্টা করব একজন গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা কিরকম হওয়া উচিত। এ সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত আজকের আর্টিকেলে আমার সাথে থাকবেন।গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি ধরনের খাবার খেতে হবে

 

গ্যাস্ট্রিক আলসার কি

গ্যাস্ট্রিক রোগটি নেই এমন মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রত্যেকের এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম বেশি রয়েছে। গ্যাসট্রিক সমস্যা থেকে গ্যাস্ট্রিকের আলসারের দেখা দেয়। গ্যাস্ট্রিক আলসার কে পেপটিক ডিজিজ অথবা গ্যাস্ট্রিক আলসার ডিজিজ বলা হয়। জাস্টিক আলসার হলো খাদ্যনালির ভেতরে যেই ক্ষত হয় সেটিকে বোঝায়। যদি আপনার গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ের চেয়ে অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায় তখন এই আলসারের সৃষ্টি হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসার সৃষ্টি হয় এইচ পাইলোরি নামে একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ

গ্যাস্ট্রিক আলসার কথাটি এখন কারো কাছেই অপরিচিত নয়। কাজেই এর লক্ষণগুলো অনেকেরই জানা। গ্যাস্ট্রিক আলসার যখন শরীরে হয় তখন আমাদের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয় যা থেকে বুঝতে পারি যে গ্যাস্ট্রিক আলসারের পূর্বাভাস। দেখুন গ্যাস্ট্রিক আলসারের বিভিন্ন লক্ষণ গুলো কি কি:

১) খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফাঁপা হয়ে যাওয়া।

২) বুকে জ্বালাপোড়া করা।

৩) পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা হওয়া।

৪) মুখ দিয়ে নুন জল উঠা।

৫) বমি বমি ভাব হওয়া কিংবা বমি হয়ে যাওয়া।

৬) পিঠে ব্যথা অনুভব হওয়া।

৭) বেশি বেশি ঢেকুর উঠা।

৮) ক্ষুধা লাগে কিন্তু অল্প খাবারই ক্ষুধা মিটে যায়।

৯) খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কম থাকে।

১০) মূত্রত্যাগের সময় রক্তপাত।

এই লক্ষণ গুলো দেখলে আপনি সহজেই আয়ত্ত করতে পারবেন যে আপনার গ্যাস্ট্রিকের আলসার আছে বা সম্ভাবনা আছে। তাই এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীর দিনের খাবার তালিকা

একজন গ্যাস্ট্রিক আলসারের আক্রান্ত রোগীর আলসারের তীব্রতা বেশি থাকলে অবশ্যই আঁশযুক্ত খাবারগুলো তার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। তাকে হালকা ধরনের খাবার যা সহজে হজম হবে এমন খাবার খেতে হবে। একজন মধ্য বয়স্ক গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর একদিনের খাদ্য তালিকা হওয়া কেমন হওয়া উচিত দেখুন:

পেটের গ্যাস দূর করতে কোন ব্যায়াম ভালো?

সকালের নাস্তা-

*পাতলা সুজি এক কাপ।

*নরম সিদ্ধ ডিম একটি।

*পাকা কলা একটি।

*সকাল ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে এক গ্লাস ইসুবগুলের শরবত।

দুপুরের খাবার-

*পোলাও চালের নরম ভাত দুই কাপ।

*নরম মাছ দুই পিস।

*পেঁপের তরকারি এক কাপ।

*পাতলা ডাল এক কাপ।

বিকালের নাস্তা-

*টক মিষ্টি দই দের কাপ।

*পাউরুটি জেলি তিন স্লাইস।

রাতের খাবার-

*নরম পোলাওর চালের ভাত 2 কাপ।

*নরম মাছ মুরগির মাংস এক পিস।

ঘুমানোর আগে-

*এক গ্লাস দুধে দুই চা চামচ ইসুবগুলের ভুসি।

একজন গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী যদি এই নিয়মে তার খাবার খায় তাহলে সে অল্প দিনের মধ্যেই আরাম পাবে এবং সুস্থ হয়ে যাবে।

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর ক্ষেত্রে করণীয়

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা পরিবর্তনের পাশাপাশি তার প্রতিদিনকার চলাফেরা কাজকর্মেও কিছু পরিবর্তন আনতে হবে তার দ্রুত সুস্থতার জন্য। গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর সুস্থ হতে করণীয় গুলো হলো:

১) প্রতিদিন সময়মতো খাবার খাওয়া।আজকে যে সময়ে খাবার খেয়েছেন কালকে ঠিক ওই সময়েই আপনি আপনার সকাল দুপুর এবং রাতের খাবার খাবেন।

*অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার বর্জন করতে হবে।

*প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।

*মাংস ডিম মোগলাই বিরিয়ানি চাইনিজ খাবার কখনোই দুপুরের মেনুতে রাখতে চেষ্টা করবেন কখনই তার রাতের খাবার মেনুতে রাখা যাবেনা। কারণ রাতে হালকা খাবারগুলো খেতে হবে।যেমন: শাক সবজি, ছোট মাছ।

৪) আলসারের রোগীদের জন্য গরম পানি খাওয়া যাবেনা আবার খুব বেশি ঠান্ডা পানিও খাওয়া যাবেনা। নরমাল পানি খাওয়াই তাদের জন্য উত্তম।

৫)গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীদের সবসময় ভাত খাওয়ার আগে এক গ্লাস অথবা দুই গ্লাস পানি খেতে হবে। তারপর ভাত খাওয়ার পরপরই পানি না খেয়ে ভাত খাওয়ার অন্তত 30 মিনিট পর পানি খাওয়া ভালো।

*গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় অন্তত একটি হলেও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার থাকতে হবে।এই ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারটি তার শরীরে laxetive হিসেবে কাজ করবে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে। এতে গ্যাস্ট্রিক তৈরি হবে না।

গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন

*সরাসরি চিনি যথা সম্ভব কমিয়ে খেতে হবে।যদি আপনি চিনি ছাড়া খাবার খেতে না পারেন তাহলে অবশ্যই গুড় দিয়ে খাবেন যা চিনির অভাব পূরণ করবে।

*বাজারে বা দোকানে থেকে কিনে খাওয়ার সমস্ত জুস বর্জন করবেন।

*অনেকেই আছেন গরম সহ্য করতে না পেরে রাতে খাওয়ার পরে আইসক্রিম খান। গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীদের ক্ষেত্রে এটা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

*গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীরা নয় একজন স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রেও কখনোই খাওয়ার পরপরই শুয়ে পড়া উচিত নয়।খাওয়ার পর পর কিছুক্ষণ আস্তে আস্তে হাঁটাচলা করবেন অথবা সোজা হয়ে বসে সময় কাটান। অন্তত 30 মিনিট পার হওয়ার পর আপনি শুতে যান।

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীরা এই নিয়মগুলো মেনে চললে খুব দ্রুত তারা এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবে।

গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণ

বিভিন্ন কারণে গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে। অনেকেই মনে করে গ্যাস্ট্রিক আলসারের অন্যতম কারণগুলোর মধ্য রয়েছে;

অতিরিক্ত খাবার খাওয়া

*অতিরিক্ত উত্তেজনা কিংবা মানসিক চাপ

*ব্যথানাশোক ঔষধ যেমন এসপিরিন গ্রহণ।

*বংশগতির ধারা

*অ্যানিমিয়া

*অপুষ্টি

*ক্ষুধামন্দা

*চা কফি অতিরিক্ত খাওয়া

*সিগারেট বা অ্যালকোহল খাবার খাওয়া

*অতিরিক্ত মসলাদার খাবার খাওয়া

*তৈলাক্ত খাবার খাওয়া

এগুলো থেকে গ্যাস্ট্রিক আলসারের সৃষ্টি হয়। তাই অবশ্যই এই জিনিসগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

কখনোই কোন রোগকে অবহেলা করা উচিত নয়। শুরুতেই কিন্তু গ্যাস্ট্রিক রোগটি জটিল আকার হয়ে আসে না। আস্তে আস্তে এটির জটিলতা বাড়ে।গ্যাস্ট্রিক সাধারণ পর্যায়ে থেকে আলসারের সৃষ্টি করে এবং সেই আলসারের তীব্রতা থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হয়ে যায়। তাই জীবন পদ্ধতির পরিবর্তন করুন। এবং রোগকে অবহেলা না করে অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ করবার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্যই কিন্তু সম্পদ। সুস্বাস্থ্য হারিয়ে গেলে কখনোই জীবনের শান্তি আসেনা। তাই সুস্থ জীবনের জন্য যা যা করণীয় তাই আমাদের করা উচিত।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার কি কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রমিত রোগ?

উত্তর: পেপটিক আলসার কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রমিত রোগ নয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে অন্য কারো এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

পেপটিক আলসার কি পাকস্থলীর কোনো রোগ?

উত্তর:পেপটিক আলসার যে শুধুমাত্র পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় বরং এটি পোস্ঠিক তন্ত্রের যে কোন অংশেই হতে পারে।

পেপটিক আলসার কি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে?

উত্তর: যদি যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে পেপটিক আলসার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

শেষ কথা

সম্মানিত পাঠক পাঠিকা বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাবার তালিকা কেমন হওয়া উচিত। আপনারা এতক্ষণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে নিশ্চয়ই এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের ওয়েবসাইটে আরও বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পেতে অবশ্যই নিয়মিত ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আর অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের সাথে থাকবেন। আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

পোস্ট ট্যাগ-

গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা, আলসার কত দিনে ভালো হয়,আলসার হলে কি লেবু খাওয়া যাবে,আলসার হলে কি ঔষধ খাব,গ্যাস্ট্রিক আলসার হলে কি করা উচিত,আলসার হলে কি ডিম খাওয়া যাবে,গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঔষধ,আলসার হলে কি হয়

আপনার জন্য আরো 

আপনার জন্য-

গ্যাস্ট্রিক দূর করতে মেথি খাওয়ার নিয়ম

অ্যাজমা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা 

থাইরয়েড রোগ থেকে মুক্তি পেতে করণীয়

চর্মরোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকারী চিকিৎসা

যক্ষা বা টিবি রোগের লক্ষণ

ক্যান্সার রোগের যেসব লক্ষণ এড়িয়ে যাবেন না

শ্বেতী রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নিন

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 505 other subscribers

 

প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন

SS IT BARI- ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন

SS IT BARI- ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এখানে ক্লিক করুন।
SS IT BARI- ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে :এখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।

SS IT BARI- টুইটার থেকে আমাদের খবর সবার আগে পেতে : এখানে ক্লিক করুন।

SS IT BARI- লিংকদিন থেকে আমাদের খবর সবার আগে পেতে : এখানে ক্লিক করুন।

SS IT BARI- ইনস্টাগ্রাম থেকে আমাদের খবর সবার আগে পেতে : এখানে ক্লিক করুন।

SS IT BARI- টুম্বলার (Tumblr)থেকে আমাদের খবর সবার আগে পেতে :এখানে ক্লিক করুন।

SS IT BARI- পিন্টারেস্ট (Pinterest)থেকে আমাদের খবর সবার আগে পেতে : এখানে ক্লিক করুন।