আত্মীয়তার সম্পর্ক – আব্দুর রহমান আল হাসান

আত্মীয়তার সম্পর্ক কি?

পৃথিবীতে মধুর একটি সম্পর্কের নাম হলো, আত্মীয়তার সম্পর্ক। প্রাচীনকালে মানুষ একত্রে বসবাস করতো। তখন মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতো। তারা নিজেদের নিরাপত্তার কারণে অন্য কোনো লোককে নিজেদের দলে প্রবেশ করতে দিত না। যদি একান্তই কারো প্রয়োজন হতো তাহলে বিয়ের মাধ্যমে আগন্তুককে নিজেদের পরিবারের অন্তর্ভূক্ত করে নিত। তখন উক্ত গোত্রটি আরো বড় হতো। এভাবেই তারা তাদের দল ভারী করতো। আমরা যদি নবীজির জীবনী পড়ি তাহলে দেখতে পাই তৎকালীন আরবে লোকজন গোত্র আকারে জীবন ধারণ করতো। তখন সে উক্ত গোত্রের নিরাপত্তা পেত। যেই গোত্র আরবে যত শক্তিশালী ছিল তাদের হাতেই ক্ষমতার রাজনীতি ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন

সালামের ফযিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য

ইসলামের বাণী নিয়ে হাজির হলেন তখন পৃথিবীর ভূ-রাজনীতির মোড় ঘুরে গেল। নবীজি এবং সাহাবাদের নেতৃত্বে মানুষ দেশ-বিদেশে ইসলামের বাণী পৌছিয়ে দিতে লাগলো। মানুষ আস্তে আস্তে নিজেদের ব্যবসার বানিজ্যের জন্য দূর-দূরান্তে সফর করতে লাগলো। শতাব্দির পর শতাব্দি এভাবে চলে আসার পর ১৬ এবং ১৭ শতাব্দিতে যখন ইউরোপে শিল্প বিপ্লব শুরু হয় তখন মানুষ দলবদ্ধভাবে বসবাস করা ছেড়ে দিতে লাগলো। তারা বিশ্বব্যবস্থার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে ফেললো। আগেরকার সময় মানুষ কূপকেন্দ্রিক বা বাজার কেন্দ্রিকভাবে বসবাস করতো। শিল্পবিল্পবের পরে মানুষ শহর কেন্দ্রিক জীবন-যাপন শুরু করে। শহরে মানুষ একে অন্যকে চিনে না। জানে না। সে কে, কোথা থেকে আসছে, জানা নেই। শহরে মানুষের একটাই চিন্তা থাকে। তা হলো, টাকা-পয়সা কামানো। অর্থ উপার্জন করা। মানুষ যখন এভাবেই চলাফেরা করে যান্ত্রিক রবোটে পরিণত হচ্ছে, নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগ করার মতো কাউকে পাচ্ছে না তখনই তাদের উপর নেমে আসলো আধুনিকতার আরেক যান্ত্রিক ব্যাধি।

আত্মীয়তার সম্পর্ক

যান্ত্রিক ডিভাইসের ছোঁয়া – আত্মীয়তার সম্পর্ক

যুগের সাথে চলার জন্য আমরা সর্বদা আমাদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকি। মোবাইলের পাশাপাশি কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবও ব্যবহার করে থাকি। সাথে তো আমাদের আনলিমিটেড ইন্টারনেট ব্রাউজ আছেই। এহেন মূহুর্তে আমরা খুব কমই আমাদের আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ করি। আমরা সারাদিন ফেইসবুক বা ইউটিউব নিয়ে পড়ে থাকি। আমাদের আত্মীয়দের খবর নেয়ার কোনো প্রয়োজন আমরা মনে করি না। আমরা ঈদের দিনেও মোবাইলে ব্যস্ত থাকি। কর্মের দোহাই দিয়ে গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়দের নিকট যেতে চাই না। অথচ আল্লাহ কুরআনে এবং নবীজি হাদীসে স্পষ্টরুপে সতর্ক করে দিয়েছেন।

কুরআনে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের কি বলা হয়েছে- আত্মীয়তার সম্পর্ক

কুরআনে আল্লাহ তা’আলা সূরা মুহাম্মাদের ২২ এবং ২৩ নং আয়াতে বলেন,

‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে হয়তো তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আল্লাহ তা’আলা এদেরকেই অভিসম্পাত, বোবা এবং বধির করে দেন।

আল্লাহ তা’আলা সূরা রা’দের ২৫ নং আয়াতে বলেন,

‘যারা আল্লাহ তা’আলাকে দেয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, সে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে লা’নত ও অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ আবাস।

আযানের জবাব এবং ফযিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

হাদীসে নবীজি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের সম্পর্কে কি বলেছেন – আত্মীয়তার সম্পর্ক

হযরত জুবায়েব ইবনে মুতয়িম রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

হযরত আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন ধরণের ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

১. যে অধিক মদপান করে।

২. যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে।

৩. যে যাদুটোনায় বিশ্বাস করে বা গণকের কথায় বিশ্বাস করে।

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতি বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাতে আল্লাহর নিকট বান্দার আমল পেশ করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের আমল গ্রহনযোগ্য হয় না।

আল্লাহ তা’আলা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের দুনিয়াতেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। আখেরাতে তো তাদের জন্য শাস্তি প্রস্তুত আছেই। তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ওই ব্যক্তি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী হিসেবে গণ্য হবে না যার সাথে আত্মীয়রা সম্পর্ক রাখলেই সে কেবল সম্পর্ক রাখে। বরং আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারী তো ওই ব্যক্তি যার সাথে আত্মীয়রা সম্পর্ক ছিন্ন করলেও সে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে।

যদি আপনার এমন কোনো আত্মীয়-স্বজন থাকে, যে আপনাকে দেখতে পারে না বা আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী নয় তার সাথে আপনি ভালো আচরণ করুন। পথে তার সাথে দেখা হলে সালাম দিন। ইনশাল্লাহ আল্লাহ ওই ব্যক্তির অন্তর নরম করে দিবেন এবং আপনাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার কারণে সওয়াব দান করবেন।

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি? বিস্তারিত তথ্য

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, একবার জনৈক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার এমন কিছু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে যাদের সাথে আমি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করি কিন্তু তারা আমার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে আমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করি কিন্তু তারা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি তাদের সাথে র্ধৈযধারণ করি কিন্তু তারা আমার সাথে কঠোরতা দেখায়। অতএব, তাদের সাথে আমার এখন করণীয় কি? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি যেমন বলছো তেমনি যদি ঘটে থাকে তাহলে যেন তুমি তাদেরকে উত্তপ্ত ছাই খাইয়ে দিচ্ছ। আর যতদিন পর্যন্ত তুমি তাদের সাথে এমন ভালো আচরণ করতে থাকবে ততদিন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে তোমার নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে একজন সাহায্যকারী নিযুক্ত থাকবে।

দুনিয়াবী দিক থেকে দেখা যায়, কাউকে গিফট করলে বা হদিয়া দিলে সে খুশী হয়। আপনি আপনার প্রতিপক্ষ আত্মীয়-স্বজনকে কিছু গিফট করুন। সদকা দিন। হাদিয়া দিন। তাহলে তারও মন নরম হবে। আপনাকেও আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্য করা হবে।

হযরত আবুক আইয়ূব রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ সদকা হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে যে আপনার শত্রু তাকে সদকা করা।

একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট দু’জন মহিলা এসে দেখলো বেলাল রা. মসজিদের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। তখন তারা তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এই বার্তা পাঠানোর জন্য বললো যে, স্বামীকে সদকা করা যাবে কিনা? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা শুনে বললেন, স্বামীকে সদকা দিলে দুইটা সওয়াব হবে। এক, সদকার সওয়াব। দুই, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষাকারীর সওয়াব।

একবার মায়মূনা রা. এক বাঁদীকে রাসূলকে না জানিয়ে আজাদ করে দিলেন। যখন নবীজি এটা জানতে পারলেন তখন তিনি বললেন, তুমি যদি তাকে আজাদ না করে তোমার মামাদের দিয়ে দিতে তাহলে আরো বেশি সওয়াবের অধিকারী হতে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে হলেও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করো।

ফজরের নামাজের শেষ সময় কখন? জানুন

শেষ কথা- আত্মীয়তার সম্পর্ক

প্রায়  অনেকগুলো হাদীস এখানে পেশ করা হলো। সুতরাং আমরা আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার গুরুত্ব বুঝতে পারলাম। আপনার আত্মীয়দের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং বছরে দুইটি ঈদ উপলক্ষ্যে বাসায় দাওয়াত করুন। তাদেরকে কিছু উপহার দিন। তাদের জন্য উত্তম খাদ্যের আয়োজন করুন। আমরা সকলে একটা মারাত্মক ভুল করে থাকি। তা হলো, আমাদের ধনী আত্মীয়দের আমরা দাওয়াত করি কিন্তু গরীব আত্মীয়দের খোঁজ-খবর রাখারও প্রয়োজন মনে করি না। এই কাজের জন্য কেয়ামতের দিন আপনাকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতা করতে হবে। তাই আমাদের সকল আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। সে যেই লেবেলেরই হোক। এটা আপনাকে মনে রাখতে হবে।

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 505 other subscribers

এছাড়াও আমাদের প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন।

SS IT BARI- ফেসবুকগ্রুপেযোগদিয়েপ্রযুক্তিবিষয়কযেকোনোপ্রশ্নকরুনঃএখানেক্লিককরুন

SS IT BARI- ফেসবুকপেইজলাইককরেসাথেথাকুনঃএইপেজভিজিটকরুন
SS IT BARI- ইউটিউবচ্যানেলসাবস্ক্রাইবকরতেএএখানেক্লিককরুনএবংদারুণসবভিডিওদেখুন।
গুগলনিউজে SS IT BARI সাইটফলোকরতেএখানেক্লিককরুনতারপরফলোকরুন।
SS IT BARI-সাইটেবিজ্ঞাপনদিতেচাইলেযোগাযোগকরুনএইলিংকে

 

বাংলাদেশের সবচাইতে বড় উদীয়মান প্রশ্ন এবং উত্তরের বাংলা ওয়েবসাইট এবং ইনকাম করার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম US IT BARI। আপনি এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বাংলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রশ্ন এবং উত্তর করে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রতিমাসে ঘরে বসে ভালো মানের ইনকাম করতে পারবেন। তাই এখুনি আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলুন এবং জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি ইনকাম করুন।

এ্যাকাউন্ট করতে এবং আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- www.usitbari.com

 

1 thought on “আত্মীয়তার সম্পর্ক – আব্দুর রহমান আল হাসান”

Leave a Comment