শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম সহকারে বিস্থারিত

শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়মঃমাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝে মাঝে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়। উল্লেখ্য, রমজান মাসে ফরজ রোজা ছাড়া অন্য সব রোজার নিয়ত সাহরির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার পাক্কা ইচ্ছা বা দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে নতুন নিয়ত না হলেও চলবে এবং সাহরি না খেতে পারলেও রোজা হবে।

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া সহ রোজা সম্পর্কিত সকল বিষয়

শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম

শাওয়াল মাসের রোজার নিয়ত

মহিমান্বিত রমজানের শেষে পশ্চিম আকাশে এক ফালি চাঁদ সিয়াম ও কিয়াম সাধনার অভূতপূর্ব পরিসমাপ্তি ঘটায়। উদযাপিত হয় ঈদুল ফিতর। কিন্তু মুমিনের হৃদয় রাজ্যে তখন দেখা দেয় ইবাদতের বসন্ত পূণ্যময় রমজান শেষ হওয়ার হাহাকার ও বেদনা।

বরকতময় রমজানে আরও বেশি ইবাদত বন্দেগি ও আত্মনিবেদন করার আকাঙ্ক্ষা তাকে পেয়ে বসে। অদৃশ্য এক যন্ত্রণায় দগ্ধ হতে থাকে। ঠিক সেই মুহূর্তে প্রভুর পক্ষ থেকে এক পশলা বৃষ্টির মতো নাজিল হয় শাওয়ালের ছয়টি রোজা।

শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাসূল (সা.) নিজে রাখতেন এবং সাহাবিদেরকে রাখতে উদ্বুদ্ধ করতেন। এই ছয় রোজার রয়েছে অপরিসীম গুরুত্ব ও ফযিলত।

হাদীস শরিফে আছে, আবু আয়্যুব আনসারি (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানের রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখল সে যেন পুরো বছর রোজা রাখল। (সহিহ মুসলিম-১১৬৪)

এই রোজার সওয়াব আল্লাহ তায়ালা দশগুণ বৃদ্ধি করে দেন। রমজান দশ মাস সমান আর শাওয়ালের ছয় দিন দুই মাস সমান। মোট এক বছর।শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম

এ মর্মে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজা দশ মাস রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের সমকক্ষ। এই হল মোট এক বছরের রোজা। (সুনানুন নাসায়ি কুবরা:২৮৬০)

পুরো শাওয়াল মাস। ঈদুল ফিতরের পরের দিন থেকে জিলকদ মাসের চাঁদ দেখা পর্যন্ত। শুরু শেষ বা মাঝের-যে কোনো ছয় দিন।

শাওয়ালের ছয় রোজা

‘শাওয়াল’ অর্থ উঁচু করা, উন্নতকরণ; উন্নত ভূমি; পূর্ণতা, ফলবতী, পাল্লা ভারী হওয়া, গৌরব করা, বিজয়ী হওয়া; প্রার্থনায় হস্ত উত্তোলন করা বা ভিক্ষায় হস্ত প্রসারিত করা; পাত্রে অবশিষ্ট সামান্য পানি; ফুরফুরে ভাব, দায়ভারমুক্ত ব্যক্তি; ক্রোধ প্রশমন ও নীরবতা পালন; সিজন করা শুকনা কাঠ। এসব অর্থের প্রতিটির সঙ্গেই শাওয়ালের সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে।

এ মাসের আমলের দ্বারা উন্নতি লাভ হয়; পূর্ণতা ফল লাভ হয়; নেকির পাল্লা ভারী হয়; গৌরব অর্জন হয় ও সাফল্য আসে; ফলপ্রার্থী আল্লাহর কাছে হস্ত সম্প্রসারিত করে প্রার্থনা করে; পূর্ণ মাস রোজা পালনের পর আরও কয়েকটি রোজা রাখে; প্রাপ্তির আনন্দে বিভোর হয়; ফরজ রোজা পালন শেষে নফল রোজার প্রতি মনোনিবেশ করে; আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জন করে; পরিপক্বতা ও স্থিতি লাভ করে।

শাবান মাসের ১৫ তারিখের ঘটনা

এসবই হলো শাওয়াল মাসের নামের যথার্থতা। আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘যখন তুমি (ফরজ) দায়িত্ব সম্পন্ন করবে তখন উঠে দাঁড়াবে এবং তুমি (নফলের মাধ্যমে) তোমার রবের প্রতি অনুরাগী হবে।’ (সুরা-৯৪ ইনশিরা, আয়াত: ৭-৮)।

শাওয়াল ইসলামি মাসগুলোর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসের বহুবিধ তাৎপর্য রয়েছে। আরবি চান্দ্রবর্ষের দশম মাস শাওয়াল। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) অগ্রণী। এ মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর বা রমজানের ঈদ। পয়লা শাওয়াল সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব।শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম

এই মাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে হজের, এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে ঈদের; এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রোজা ও রমজানের এবং এর সঙ্গে যোগ রয়েছে সদকা ও জাকাতের। এ মাসের ৭ তারিখে তৃতীয় হিজরি সনে (২৩ মার্চ ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে) ওহুদ যুদ্ধে বিজয় হয়েছিল। এই মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত উর্বর ও উপযোগী।

শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল।

’ (মুসলিম: ১১৬৪; আবুদাউদ: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, সহিহ্-আলবানি)। চান্দ্র মাস হিসেবে তিন শ চুয়ান্ন বা তিন শ পঞ্চান্ন দিনে এক বছর হয়। প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৬০)।

কদরের নামাজের নিয়ম-লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত

এই হিসাবে রমজান মাসে এক মাসের (৩০ দিনের) রোজা ১০ গুণ হয়ে তিন শ দিনের সমান হয়। অবশিষ্ট চুয়ান্ন বা পঞ্চান্ন দিনের জন্য আরও ছয়টি পূর্ণ রোজার প্রয়োজন হয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’

শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়।

উল্লেখ্য, রমজান মাসে ফরজ রোজা ছাড়া অন্যান্য সব রোজার নিয়ত সাহ্‌রির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে নতুন নিয়ত না হলেও চলবে এবং সাহ্‌রি না খেতে পারলেও রোজা হবে। (ফাতাওয়া শামি)।

রমজানের ছুটে যাওয়া কাজা রোজা পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যেকোনো সময় আদায় করা যাবে। রমজানের কাজা রোজা রাখার জন্য সময় সংকীর্ণ হলে তার আগে নফল রোজা রাখা বৈধ ও শুদ্ধ।

সুতরাং ফরজ রোজা কাজা করার আগে নফল রোজা রাখতে পারবেন। তবে সম্ভব হলে আগে ফরজ রোজার কাজা আদায় করাই উত্তম। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৬৬)। হজরত আয়িশা (রা.) বলেন, ‘আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত; তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না।’ (বুখারি: ১৯৫০; মুসলিম: ১১৪৬)।

শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত

রমজান মাসের পরের মাস অর্থাৎ হিজরি সনের দশম মাস হলো শাওয়াল মাস। এ মাসের প্রথম দিনে মুসলিম উম্মার সর্ববৃহৎ জাতীয় উৎসব, ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। উৎসব আনন্দে মুসলমানগণ যাতে রমজানের মহৎ শিক্ষাটা ভুলে না যায়, হয় তো সে জন্যই রাসুলে করিম (সা.) এ মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখতে উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব ফরজ রোজাগুলো রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১১৬৪)

সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি ২০২২

আলোচ্য হাদিসে যে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয়, তা হলো- শুধু শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখলেই এক বছরের নফল রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে তেমনটি নয়। আবার শুধু মহিমাম্বিত রমজানে পুরো একমাস রোজা রাখলেও এক বছরের নফল রোজার সওয়াব দেওয়া হবে সে কথাও কোথাও বলা হয়নি।

বরং পুরো রমজান মাস রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখলে তবেই পূর্ণ এক বছর নফল রোজা রাখার সওয়াব লাভ করা যাবে সে কথাই হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন।

বস্তুত হাদিসে পবিত্র   কোরআনেরই একটি আয়াতের বক্তব্য বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে কেউ কোন নেক আমল করবে তাকে তার দশ গুণ সওয়াব প্রদান করা হবে। ’ (সুরা আল-আনআম: ১৬০) সুতরাং রমজানের এক মাসের ১০ গুণ হলো দশ মাস আর শাওয়াল মাসের ছয়দিনের দশগুণ হলো ৬০ দিন অর্থাৎ দুইমাস।শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম

অর্থাৎ পূর্ণ এক বছরের নফল রোজার সওয়াব লাভের জন্য রমজানের রোজা রাখার পরে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখার শর্ত থাকলেও যদি কেউ কোনো কারণে রমজানের পূর্ণমাস রাখতে না পেরে থাকেন, তাহলে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখা যাবে না তেমনটি নয়। সে ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরের নফল রোজার সওয়াব না পেলেও নফল রোজা পালনের সীমাহীন নেকি তিনি পাবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

কীভাবে রাখবেন ছয় রোজা

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) শাওয়াল মাসের ভেতর ছয় রোজা রাখার কথা বলেছেন। মাসের প্রথম দিকে, মধ্যভাগে না শেষাংশে সে কথা হাদিসে  উল্লেখ নেই। আবার ছয়টি রোজা একসঙ্গে লাগাতার রাখতে হবে, না-কি বিরতি দিয়ে দিয়ে রাখতে হবে, সে কথারও কোনো উল্লেখ নেই।

তাই বিজ্ঞ ফকীহ ও আলিমগণের অভিমত হল, যেহেতু শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলিম উম্মাহর জাতীয় উৎসব এবং ওই দিনে রোজা রাখা হারাম, সেহেতু ঈদুল ফিতরের দিনটি বাদ দিয়ে মাসের যে কোনো ছয়দিনে রোজা রাখলেই উল্লিখিত সওয়াব লাভ করা যাবে।শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম

এই আরবি শাওয়াল মাসের অর্থাৎ প্রথমদিকে, মাঝামাঝি দিনগুলোতে অথবা শেষদিকে, আবার একাধারে ছয়দিন অথবা একদিন রোজা রেখে তারপর একদিন বা দু’দিন বিরতি দিয়ে আবার একদিন যে কোনোভাবে রোজা রাখা যাবে। শাওয়াল মাসের মধ্যে ছয়টি রোজা রাখলেই হাদিসে বর্ণিত সওয়াব পাওয়া যাবে।

শাওয়াল মাসের রোজার উপকারিতা

১. ফরজ নামাজের আগে পরে যেমন সুন্নত নামাজ আছে রমজানের ফরজ রোজার জন্য শাবান ও শাওয়ালের রোজা তেমনি। হাদীসে আছে রাসূল সা. বলেছেন, “কিয়ামতের দিন ফরজ নামাজে ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিলে সেটা নফল নামাজ দিয়ে পূর্ণ করা হবে।”

অনেক সময় ফরজ রোজায় ত্রুটি ও অপূর্ণতা থেকে যায়। সেই ত্রুটি পূর্ণ হবে এই সব নফল রোজার দ্বারা।

২. রমজানের রোজার পর আবার শাওয়ালের রোজা রাখতে পারাটা রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি আলামত। কারণ আল্লাহ তাআলা যখন কোনো বান্দার নেক কাজ কবুল করেন তখন অন্য আরও নেক কাজের তাওফিক দান করেন।

ফজরের নামাজ কয় রাকাত? ফজরের নামাজের শেষ সময়-2022

৩. রমজানের রোজার কারণে আল্লাহ পেছনের গুনাহ মাফ করে দেন। ফলে বান্দার উচিত কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আরও রোজা রাখা। (লাতাইফুল মাআরিফ-২২০-২২১)।

শাওয়াল মাসের ৬ রোজার জরুরি কিছু বিষয়ঃ

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাওয়াল মাসে ৬টি নফল রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। শাওয়াল মাসের ৬ রোজা প্রসঙ্গে অনেকেরই বিশেষ ৯টি প্রশ্ন আছে। যেগুলোর উত্তর অনেকেই জানেন না। তাদের জন্য প্রশ্নগুলোর উত্তর তুলে ধরা হলো-

১. শাওয়াল মাসে ৬টি নফল রোজা রাখালে কী উপকার হবে?রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে (পুরো শাওয়াল মাসের মধ্যে যে কোনো সময়) ৬টি রোজা রাখল; ওই ব্যক্তি সারা বছর রোজা রাখার সমান সাওয়াব পাবে।

’ (মুসলিম)কেন সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাবে?ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি শাওয়ালের ৬ রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, রমজান মাস ২৯/৩০ হয়ে থাকে। যদি ৩০ ধরা হয় আর শাওয়ালের ৬ রোজা ধরা হয় তবে রোজা হয় ৩৬টি।

আর আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ১০গুণ বাড়িয়ে দেন।’সে হিসেবে ৩৬টি রোজায় ১০ গুণ সাওয়াব পেলে ফলাফল হয় ৩৬০ দিন তথা পুরো বছর রোজা রাখার সাওয়াব। আর এভাবেই সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পায় রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের ৬ রোজা পালনকারী রোজাদার।‘

আয়াতুল কুরসীর ফযিলত

২. শাওয়ালের রোজা কি রমজানের রোজা কবুল হওয়ার প্রমাণ?রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি আলামত হলো- রমজানের রোজা পালনকারী ব্যক্তির শাওয়ালের রোজা রাখা। যদি কারো রমজানের রোজা কবুল হয় তবে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে শাওয়ালের ৬ রোজা রাখার তাওফিক দান করেন।

কারণ কোনো আমল কবুল হয়েছে কিনা তার আলামত হচ্ছে- আগের নেক আমলের ধারা পরবর্তীতে ধরে রাখা। যেমনিভাবে রমজানের রোজা পালনকারী রমজান পরবর্তী শাওয়াল মাসে আবারও রোজা পালনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। আর তা হয়ে থাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে।

নামাজ কার জন্য পড়ি

৩. শাওয়ালের রোজা কি একটানা রাখতে হবে?শাওয়ালের রোজা কি একটানা রাখতে হবে নাকি ভেঙে ভেঙে রাখা যাবে। এর সঙ্গে রোজা হওয়া-না হওয়ার বিষয় জড়িত আছে কিনা। এর উত্তর হলো-‘শাওয়ালের ৬টি রোজা একটানা না রেখে ভেঙে ভেঙে রাখলেও আদায় হয়ে যাবে। কেউ যদি একটানা রোজা রাখে তাতেও আদায় হয়ে যাবে।’কারণ হাদিসের কোনো বর্ণনায় শাওয়ালের ৬ রোজা একসঙ্গে রাখার ব্যাপারে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।

শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম

৪. শাওয়ালের রোজা রাখার সহজ উপায় কী?সাপ্তাহিক ও মাসিক (আইয়্যামে বিজ) রোজার সঙ্গে মিল রেখে সহজেই শাওয়ালের রোজাগুলো রাখা যায়। আর এতে বেশি কষ্টও হয় না।কারণ সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখলেই পুরো মাসে সহজে ৬টি রোজা রাখা সহজ হয়ে যায়।

আবার আইয়্যামে বিজের ৩টি রোজা একসঙ্গে রেখে অন্য সময়ে ৩টি রোজা রাখার মাধ্যমেও ৬ রোজা রাখা যায়। তবে কেউ যদি একটানা ৬টি রোজা রাখে তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

৫. শাওয়ালের রোজার নিয়ত কখন করতে হবে?শাওয়ালের ৬ রোজার নিয়ত সন্ধ্যায় কিংবা রাতেই করতে হবে। পরের দিন সূর্য ওঠার পর করলে হবে না।পবিত্র রমজান মাসে ভোর রাতে ওঠার একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়।

সে সময় সাহরি খেয়ে রমজানের রোজা পালনকারীরা রোজার নিয়ত করে থাকেন।শাওয়ালের ৬ রোজার ক্ষেত্রে কারো যদি ঘুম থেকে ওঠার পর স্মরণ হয় বা মনে করে যে, রাতে তো খাবার খাওয়া হয় নাই; সুতরাং শাওয়ালের ৬ রোজার নিয়ত করে ফেলি। তবে কি রোজা হবে?‘না’, এমনটি করলে রোজা হবে না।

কারণ শাওয়ালের ৬ রোজাসহ নফল রোজা রাখার ক্ষেত্রে নিয়ত করতে হবে রাত থেকে। কেউ যদি সন্ধ্যা রাতে নিয়ত করে ফেলে যে, আমি আগামীকাল রোজা রাখবো আর দিনের বেলা রোজা পালন করে তবে ওই ব্যক্তির রোজা হয়ে যাবে।কিন্তু সন্ধ্যা বা রাতে নিয়ত না করে সূর্য ওঠার পর ঘুম থেকে ওঠে রোজার নিয়ত করলে রোজা হবে না।

?? গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন ??

৬. রমজানের কাজা বা ভাঙতি রোজা থাকলে আগে কোন রোজা রাখতে হবে?হ্যাঁ, অবশ্যই আগে রমজানের ভাঙতি/কাজা রোজা রাখতে হবে। তারপর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখবে। কারণ শাওয়ালের রোজার সাওয়াব ঘোষিত হয়েছে তাদের জন্য যারা রমজানের রোজা পূর্ণ করেছে।

কেননা হাদিসে এমনই নির্দেশনা ও শর্ত দেওয়া হয়েছে।আর রমজানের রোজা পালনকারী ব্যক্তি শাওয়ালের ৬ রাখলেই কেবল ৩৬ দিন পূর্ণ হবে। আর তা ৩৬০ দিনের সাওয়াব হিসেবে পরিগণিত হবে।সুতরাং যদি কারো অসুস্থতা বা সফরের কারণে ভাঙতি রোজা থাকে। আর মা-বোনদের নিয়মিত অসুস্থতার কারণে ভাঙতি রোজা থাকে তবে তা আগে আদায় করতে হবে। তারপর শাওয়ালের ৬ রোজা রাখতে হবে।

তারাবির নামাজের নিয়ম-2022

৭. সাপ্তাহিক ও আইয়্যামে বিজের রোজার পালনের সময় শাওয়ালের ৬ রোজার নিয়ত করলে হবে কি?সাপ্তাহিক সোম ও বৃহস্পতিবার এবং আইয়্যামে বিজ তথা চন্দ্র মাসের ১৩-১৪-১৫ তারিখ রোজা রাখা সুন্নাত।

এখন কেউ যদি এ রোজাগুলো রাখার সময় শাওয়ালের ৬ রোজার নিয়ত করে তবে শাওয়ালের রোজা আদায় হবে কি?হ্যাঁ, সাপ্তাহিক ও মাসিক (চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) রোজা রাখার সময় কেউ যদি শাওয়ালের ৬ রাখার নিয়ত করে তবে তার শাওয়ালের রোজা আদায় হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ। তবে যে কোনো একটির নিয়ত করতে হবে। হয় সাপ্তাহিক/মাসিক রোজার নিয়ত নতুবা শাওয়ালের ৬ রোজা।

৮. শাওয়াল মাসে ৬ রোজা না রেখে পরের কোনো সময় এ রোজা রাখলে হাদিসে ঘোষিত সাওয়াব পাওয়া যাবে কি?‘না’, শাওয়াল মাস চলে যাওয়ার পর (অন্য মাসে) ৬ রোজা (কাজা) রাখলে হাদিসে ঘোষিত ৬ রোজায় সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যাবে না।

কারণ ৬টি রোজা রমজানের রোজা পালনকারীর জন্য শাওয়াল মাসের মধ্যে রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে। যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে, তারাই বছরজুড়ে রোজা রাখার সাওয়াব পাবে। এ সাওয়াব শাওয়াল মাসে রোজা রাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

সালাত আদায় করেও জাহান্নামী কেন?

৯. শাওয়াল মাসের রোজা রাখার জন্য তারাবিহ নামাজ পড়তে হবে কি?‘না’, শাওয়াল মাসের ৬ রোজার জন্য তারাবিহ নামাজ পড়তে হবে না। রমজান মাসের রোজা রাখার সময় রাতে যেভাবে তারাবিহ আদায় করা হয়, সেভাবে শাওয়াল মাসের রোজার জন্য তারাবিহ পড়া লাগবে না।

সুতরাং রমজানের সব রোজা পালনকারী মুমিন মুসলমানের উচিত বছরজুড়ে রোজা রাখার সাওয়াব পেতে শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা একটানা কিংবা থেমে থেমে আদায় করা। আর তাতেই মিলবে বছরজুড়ে রোজা রাখার সাওয়াব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাওয়ালের ৬ রোজা যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়ার তাওফিক দান করুন।

আরও আপনার জন্য-

রিযিকের মালিক আল্লাহ

অর্থ বুঝে নামাজ পড়ি

আত্মীয়তার সম্পর্ক

সালামের ফযিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

আজান অর্থ কি? আজানের জবাব এবং ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি? আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত সহ বিস্তারিত

আসতাগফিরুল্লাহ দোয়া-ক্ষমা প্রার্থনার নিয়ম ও ৫ দোয়া

মোনাজাতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ । দোয়া কবুলের আমল-রিজিক বৃদ্ধির দোয়া-আয়না দেখার দোয়া

তওবাতুন নাসুহা, সঠিক পথে আসুন

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join ৫০৬ other subscribers

প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন

 SS IT BARI- ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন

SS IT BARI- ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন
SS IT BARI- ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এএখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
SS IT BARI-সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে

SANAUL BARI

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *