বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা- বাংলাদেশের অজানা ইতিহাস যেনে নিন

বাংলাদেশের ইতিহাস –বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি জনবহুল ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটি বিশ্ব মানচিত্রে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়।বাংলাদেশের সভ্যতার ইতিহাস চার সহস্রাব্দেরও বেশি সময় ধরে সেই ক্যালকোলিথিক যুগ থেকে চলে আসছে।

দেশটির প্রারম্ভিক ইতিহাস হচ্ছে আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হিন্দু ও বৌদ্ধ সাম্রাজ্যসমূহের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতার ইতিহাস।ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শতাব্দীতে এ অঞ্চলে ইসলামের আগমণ ঘটে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বখতিয়ার খিলজীর নেতৃত্বে সামরিক বিজয়ের পাশাপাশি শাহ জালালের মতো সুন্নি দাঈদের নিরলস প্রচেষ্ঠায় ধীরে ধীরে ইসলাম এদেশে প্রভাবশালী ধর্ম হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে মুসলিম শাসকরা মসজিদ নির্মাণ করে ইসলাম প্রচারে অবদান রাখেন।বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

চতুর্দশ শতাব্দী থেকে এই অঞ্চল শাহী বাংলা হিসেবে সুলতান শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ কর্তৃক শাসিত হয় যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং আঞ্চলিক সাম্রাজ্যগুলোর উপর সামরিক আধিপত্যের সূচনা করে। ইউরোপীয়রা সেসময় এই শাহী বাংলাকে বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে ধনী দেশ বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে এই অঞ্চলটি মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে এবং মুঘল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে ধনী প্রদেশ হিসাবে পরিগণিত হয়।

বাংলা সুবাহ গোটা মুঘল সাম্রাজ্যের জিডিপির প্রায় অর্ধেক এবং বিশ্ব জিডিপির ১২% উৎপাদন করে যা সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের থেকেও বেশী ছিল।এই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি প্রাথমিক শিল্পায়ন যুগের সূচনা করে। এ সময় রাজধানী শহর ঢাকার জনসংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়।

ভালোবাসা দিবস কেন পালন করা হয়? যেনে নিন অজানা ইতিহাস

অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর বাংলা নবাবদের অধীনে একটি আধা স্বায়ত্তশাসিত রাস্ট্রে পরিণত হয় যার শাসনভার শেষ পর্যন্ত নবাব সিরাজউদ্দৌলার হাতে ন্যস্ত হয়। তারপর ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ অঞ্চল দখল করে। বাংলা সরাসরি ব্রিটেনের শিল্প বিপ্লবে অবদান রাখে কিন্তু এর ফলে তার নিজের শিল্পায়ন ধ্বংস হয়ে যায়।পরবর্তীতে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলা ভারতের পৃথকীকরণ- বাংলাদেশের ইতিহাস

১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে বাংলা ও ভারতের পৃথকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশের সীমানা প্রতিষ্ঠিত হয়, যখন উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের ফলে এই অঞ্চলটি নবগঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে পরিণত হয়।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর নয় মাস ব্যাপী সংগঠিত হওয়া রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার পর নতুন রাষ্ট্রটি দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ব্যাপক দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামরিক অভ্যুত্থানের মত অসংখ্য সমস্যার মুখোখুখি হয়।

?? গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন ??

১৯৯১ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পরে দেশটিতে আপেক্ষিক শান্তি স্থাপিত হয় এবং দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মানবসম্পদ ও পোশাকশিল্পে অগ্রগতির মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়ে সমগ্র বিশ্বে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

বাংলা শব্দের উৎপত্তি- বাংলাদেশের ইতিহাস

বাংলা’ বা ‘বাংগালা’ শব্দটির সঠিক উৎপত্তিটি অজানা রয়েছে। সম্ভবত ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি এ অঞ্চলে বসবাসকারী দ্রাবিড় গোষ্ঠী ‘বঙ’ থেকে ‘বঙ্গ’ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। অন্যান্য সূত্র থেকে ধারণা করা হয় যে অস্ট্রিক জাতির সূর্যদেবতা “বোঙ্গা” থেকে বঙ্গ কথাটির উদ্ভব হয়েছে।

মহাভারত, ভারতীয় পুরাণ ও হরিবংশের মতে রাজা বলির বঙ্গ নামে এক ক্ষেত্রজ পুত্র ছিলেন যিনি প্রাচীন ‘বঙ্গ রাজ্য’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। রাষ্ট্রকূট রাজা তৃতীয় গোবিন্দের নেসারী শিলালিপিতে প্রথম ‘বঙ্গলা’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে যেখানে ধর্মপালকে ‘বঙ্গলার রাজা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একাদশ শতাব্দীতে বাংলা আক্রমণকারী চোল সাম্রাজ্যের রাজা প্রথম রাজেন্দ্র চোলার নথি নিশ্চিত করে যে, সে সময় গোবিন্দচন্দ্র বাংলার শাসক ছিলেন। সেই নথিতে বাংলাকে “বাঙ্গালা-দেশ” বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বাংলার বর্ষাকালের স্পষ্ট বর্ণনাস্বরূপ লিপিবদ্ধ রয়েছে যে,বাঙ্গালা-দেশ যেখানে কখনও বৃষ্টি থামেনা।

বীমাকে ইসলাম কতুটুকু সমর্থন করে – আব্দুর রহমান আল হাসান

সুলতান ইলিয়াস শাহ “শাহ-ই-বাঙ্গালাহ” নামক উপাধি গ্রহণ করেন এবং তারপর থেকে সকল মুসলিম সূত্রেই বাংলাকে বাঙ্গালাহ বলা হয়েছে।বর্তমান আধুনিক বাংলাদেশের কিছু অংশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ নিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাংশে বঙ্গ রাজ্য গঠিত হয়েছিল। প্রাচীনকালে বাংলাদেশের দুটি প্রভাবশালী সম্প্রদায় ছিল বঙ্গ ও পুণ্ড্র।বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

স্বাধীনতা আন্দোলন- বাংলাদেশের ইতিহাস

১।ভাষা আন্দোলন

ভাষা আন্দোলন ছিল পূর্ব বাংলার ইতিহাসে একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন যার উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায়। পাকিস্তানের সরকারী কর্মকাণ্ডে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এ আন্দোলন পরিচালিত হয়। মুফতি নাদিমুল কামার আহমেদ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দান করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের বিভাজনের মাধ্যমে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র সংগঠিত হয়; তার দুটি অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান এর মধ্যে ব্যাপক সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং ভাষাগত পার্থক্য বজায় ছিল। এ পার্থক্য পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করে। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রের একমাত্র জাতীয় ভাষা হিসেবে উর্দুকে ঘোষণা করে, এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষা…

২।রাজনীতিঃ ১৯৫৪-১৯৭০

পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে ধীরে ধীরে বিরাট পার্থক্য গড়ে ওঠে। পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা মোট জনসংখ্যার একটি সংখ্যালঘু অংশ ছিল, কিন্তু রাজস্ব বরাদ্দ, শিল্প উন্নয়ন, কৃষি সংস্কার ও নাগরিক প্রকল্পসমূহের বৃহত্তম অংশের ভাগীদার ছিল তারাই । পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক পরিষেবাগুলো মূলত পাঞ্জাবি জাতি দ্বারা অধিকৃত ছিল।পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে শুধুমাত্র একটি রেজিমেন্ট ছিল বাঙ্গালীদের। অনেক বাঙ্গালী পাকিস্তানিদের কাশ্মীর ইস্যুতে স্বভাবজাত উৎসাহ বোধ করেনি , কারণ তারা মনে করত এটি পূর্ব পাকিস্তানকে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলবে এবং এটি শেষ পর্যন্ত তার অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হয়ে দেখা দেবে।
১৯৬৮ সালের গোড়ার দিকে শেখ মুজিব ও অন্যান্য ৩৪ জন নেতার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ভারতবর্ষের সহায়তায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার পরিকল্পনা করছিল। যাইহোক এই বিচারের ফলে একটি গণ আন্দোলন সংগঠিত হয় এবং সকল বন্দীদের মুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে একজন বিদ্রোহী, জহুরুল হককে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর ফলে আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং পরবর্তীতে ২২ ফেব্রুয়ারি সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। গণআন্দোলন পরবর্তীকালে ‘৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে রূপ লাভ করে।
১৯৬৯ সালের ২৫শে মার্চ আইয়ুব খান জেনারেল ইয়াহিয়া খান কে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পরবর্তীকালে নতুন রাষ্ট্রপতি দেশের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত করে দেন। যাইহোক কিছু সংখ্যক ছাত্র গোপনীয়তার সাথে আন্দোলন বজায় রাখে। সিরাজুল আলম খান এবং কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বাধীন ‘১৫ ফেব্রুয়ারি বাহিনী’ নামে একটি নতুন দল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে, ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ সালের ৫ই অক্টোবরের জন্য একটি নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। পশ্চিমের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে সাফল্যজনক নেতৃত্ব পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগকে সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দলে পরিণত করে।

৩।স্বাধীনতার প্রস্তুতি 

আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের বেশিরভাগ অংশে ১৯৭০-৭১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং পাকিস্তান সরকার সাংবিধানিক প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাথে আলোচনা শুরু করে। কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রদেশগুলোর মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন হয়, সেইসাথে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হয়। তবে ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করে দেন, যা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক বিক্ষোভের সূচনা করে।১৯৭১ সালের ২রা মার্চ স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের এক ছাত্র নেতা আ স ম আবদুর রবের নির্দেশে বাংলাদেশের নতুন (জাতীয় পতাকা উত্থাপিত হয়।আন্দোলনকারী ছাত্রনেতারা দাবী করে যে শেখ মুজিবুর রহমান অবিলম্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করুন, কিন্তু মুজিবুর রহমান এই দাবীতে সম্মত হতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন।

বরং তিনি ৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য একটি জনসভায় তার পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ৩রা মার্চ ছাত্রনেতা শাহজাহান সিরাজ স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের নির্দেশে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সামনে স্বাধীনতার ইস্তেহার পাঠ করেন।৭ মার্চ তারিখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি জনসাধারণের সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর চলমান স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রসরতা সম্পর্কে জন সাধারণকে উদ্বুদ্ধ করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পরবর্তীতে জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ৭ই মার্চ এর ভাষণে, পাকিস্তানি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আসন্ন যুদ্ধের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে প্রস্তুত থাকার জন্য।
যদিও তিনি সরাসরি স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করেননি, কারণ তখনও আলোচনা চলছিল, তিনি তার শ্রোতাদেরকে কোনও এক সর্বাত্মক যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানান। শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল চাবিকাঠি বলে মনে করা হয়, এবং এ ভাষণের বিখ্যাত উক্তি ছিল:

“এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।”

৪।স্বাধীনতার যুদ্ধ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ২৬ মার্চের প্রথমার্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সামরিক অভিযান শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং রাজনৈতিক নেতারা বহুবিভক্ত হয়ে যান। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার আগে, শেখ মুজিবুর রহমান একটি স্বাক্ষরিত নোট প্রেরণ করেন যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এই নোটটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস এর বেতার ট্রান্সমিটার দ্বারা প্রচারিত হয়। বাংলাদেশী আর্মি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট রেডিও স্টেশন দখল করেন এবং ২৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।

সামরিক উদ্দেশ্যে বাংলাদেশকে ১১ জন কমান্ডারের অধীনে ১১ টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। এই আঞ্চলিক বাহিনীগুলোর সাথে সাথে যুদ্ধের জন্য আরও তিনটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হয়ঃ জেড ফোর্স, এস ফোর্স এবং কে ফোর্স। এই তিনটি বাহিনীর নাম উক্ত বাহিনীর কমান্ডারদের নামের প্রথম অক্ষর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। মেহেরপুর সরকার কর্তৃক প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ বেশিরভাগ অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল, যা ভারত কর্তৃক সমর্থিত ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং বাংলার মুক্তি বাহিনী এর মধ্যে যুদ্ধের সময় আনুমানিক এক কোটি বাঙালী, প্রধানত হিন্দু, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে আশ্রয় নেয়।

ভারত বাংলাদেশকে নানাভাবে সাহায্য করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদান অপরিসীম।
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি ভারতের সহানুভূতি ছিল এবং ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশীদের পক্ষে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করে। এর ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুই সপ্তাহের একটি সংক্ষিপ্ত এবং ব্যাপক বিধ্বংসী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজী এবং পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাধ্যক্ষগণ ভারত ও বাংলাদেশের মিত্রবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকালে শুধুমাত্র কয়েকটি দেশ নতুন রাষ্ট্রকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৯০ হাজারেরও বেশি পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।

বিশ্বসভ্যতা কি?

মানব জাতির ক্রমাগত প্রচেষ্টা ও কর্মধারার ফল হিসেবেই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো। বিশ্বের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও অবস্থানগত পার্থক্যের কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাবে তাদের জীবনধারা ও চিন্তার ক্ষেত্রে নয়ন ঘটিয়েছে! এর ফলে; বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সভ্যতার ধারক হিসেবে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন ধর্মীয় মতাদর্শ, রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক প্রথা ও আচরণ, ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক কাঠামাে সমূহ।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সভ্যতা সমূহের এসব বিকাশমান উপাত্তের দিকে দৃষ্টি দিয়ে ঐতিহাসিকগণ কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন।

বিশ্বসভ্যতাসমূহের (মিশর, সিন্ধু, গ্রিক রাম) সংক্ষিপ্ত পটভূমি- বাংলাদেশের ইতিহাস

১।গ্রিক সভ্যতা

মহাকবি হোমারের বিখ্যাত মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসি- তে তিনি প্রাচীন গ্রিসের যে কাহিনীগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন তাতে ঐতিহাসিকগণ নড়ে-চড়ে বসেন। হোমারের কাহিনীকে শুধু কাহিনী না ভেবে এর ভেতরের সত্যতা খুঁজতে শুরু করেন। প্রত্নতত্ত্ববিদদের অক্লান্ত চেষ্টায় উন্মুক্ত হয় গ্রিক সভ্যতার সঠিক ইতিহাস। ইজিয়ান সাগরের দ্বীপপুঞ্জে এবং এশিয়া মাইনরের পশ্চিম উপকূলে আবিষ্কৃত হয় এক উন্নততর প্রাচীন নগর সভ্যতা। সন্ধান মেলে মহাকাব্যের ট্রয় নগরীসহ একশত নগরীর ধ্বংস স্তুপের। যাকে বলা হয় ঈজিয়ান সভ্যতা বা প্রাক ক্লাসিক্যাল গ্রিক সভ্যতা। এই সভ্যতার অধিকাসীরা ছিল সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি-ঐতিহ্যের অধিকারী। সভ্যতাটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

* মিনিয়ন সভ্যতা: খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ১৪০০ পর্যন্ত সময়কালকে মিনিয়ন সভ্যতার স্থায়ীত্ব ধরা হয়।

* ইজিয়ান সভ্যতা: খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১১০০ পর্যন্ত সময়কালকে ইজিয়ান সভ্যতার স্থায়ীত্ব ধরা হয়।

২।রোমান সভ্যতা

ইতালির খরস্রোতা টাইবার নদীর তীরে ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা সাতটি পাহাড়ের আশে পাশে বিক্ষিপ্তভাবে মানুষ বসবাস করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে এই বাসস্থানগুলো মিলে একটি নগরি গড়ে ওঠে। এই নগর রাষ্ট্রটি ক্রমেই বেড়ে চলল এবং বিস্তার লাভ করতে করতে পরিণত হয় এক বিশাল সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে। রোমকে কেন্দ্র করে এই সুবিশাল সাম্রাজ্য ও সভ্যতা গড়ে ওঠে বলে ইতিহাসে এটি রোমান সভ্যতা নামে পরিচিত। সে সময়ের প্রথম দিকে রোমের শাসনভার ছিল একজন রাজার অধীনে। তখন একটি সভা ও সিনেট ছিল। রাজার স্বেচ্ছাচারিতার জন্য তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং ৫১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রোমান সভ্যতা প্রায় ৬০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল।

৩।মিশরীয় সভ্যতা

আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে বর্তমানে যে দেশটির নাম ইজিপ্ট, সেই দেশেরই প্রাচীন নাম মিশর। খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ থেকে ৩২০০ অব্দ পর্যন্ত নীল নদের অববাহিকায় একটি সমৃদ্ধ জনপদের উদ্ভব হয়। এ সময় থেকে মিশর প্রাচীন সভ্যতায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করে। এরপর ৩২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে প্রথম রাজবংশের শাসন আমল শুরু হয়। ঐ সময় থেকে মিশরের ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয়। একই সময়ে নারমার বা মেনেস হন একাধারে মিশরের প্রথম নরপতি এবং পুরােহিত। তিনি প্রথম ফারাও-এর মর্যাদাও লাভ করেন। এরপর থেকে ফারাওদের অধীনে মিশর প্রাচীন বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে একের পর এক উল্লেযােগ্য অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

৪।সিন্ধু সভ্যতা

সিন্ধু সভ্যতা বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম। খ্রিস্টের জন্মের আনুমানিক চার থেকে পাঁচ হাজার অব্দে এর গোড়াপত্তন হয়। সিদ্ধু সভ্যতার দুটি প্রধান কেন্দ্র বর্তমান পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলার মহেঞ্জোদারো এবং পাঞ্জারের ইরাবতী নদীর তীরে হরপ্পা। সিন্ধু সভ্যতার উৎপত্তি সিন্ধু নদীর তীরে, পরে তা পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে বহুদূর বিস্তৃত হয়। বলা হয়, এটি ১৫ লক্ষ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এই সভ্যতার সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় সুমেরীয় সভ্যতার। কৃষিকর্মের উন্নতি সত্ত্বেও এটি ছিল নগর ও বাণিজ্যভিত্তিক সভ্যতা। অনেকের ধারণা, চীন, সুমেরীয় ও মিশরের প্রাচীন সভ্যতার তুলনায় সিন্ধু সভ্যতা ছিল বেশি অগ্রসর ও উন্নত।বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা

মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পাতে খনন কাজ চালিয়ে পাওয়া গেছে উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ও পোতাশ্রয়ের সন্ধান। সুপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, আগুনে পোড়ানো ইট, পাথরের মন্দির, সমাধিস্থান ও শিক্ষায়তনের নিদর্শন ও পাওয়া গেছে এখানে। সিন্ধু সভ্যতায় ছিল সুবিন্যস্ত শাসন ব্যবস্থা এবং ছিল নিজস্ব চিত্রলিপি ও লিখন প্রণালী। ওদের পোশাক পরিচ্ছদের অন্তর্ভুক্ত ছিল কার্পাস সুতোর বস্ত্র, চাদর ইত্যাদি। দেহের শোভাবর্ধন করার জন্য তারা সোনা, রূপা, শঙ্খ ও মূল্যবান পাথরের অলঙ্কার, পশুর হাড়, হাতির দাঁতের চিরুনি, আয়না, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহার করতো। সিন্ধু সভ্যতার গোড়াপত্তন কারা করেছিল এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।

আরও পড়ুন-

কেন অর্থ বুঝে নামাজ পড়া উচিৎ: পড়ুন

আত্মীয়তার সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ – জানুন

সালাম দিলে কি আপনি লাভবান হবেন? জানুন

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join ৫০৬ other subscribers

এছাড়াও আমাদের প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন।

SS IT BARI- ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন

SS IT BARI- ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন
SS IT BARI- ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এএখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
SS IT BARI-সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে

 

স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ইংলিশে সকল সঠিক তথ্য জানতে আমাদের SS IT BARI- ভালোবাসার টেক ব্লকের আরেকটি সংস্করণ, US IT BARI- All About Healthy Foods ওয়েব সাইট টি ভিজিট করতে পারেন।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন – www.usitbari.com 

SANAUL BARI

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *