প্রাচীনকালের মহাবিশ্ব – আব্দুর রহমান আল হাসান

প্রাচীনকালের মহাবিশ্ব– বিজ্ঞানের চর্চার শুরু আজ থেকে নয়। বহু প্রাচীনকাল থেকেই এর চর্চা শুরু। শুরুতে কিন্তু সব তথ্য সঠিক ছিল, এমনও নয়। কখনো দেখা গেছে, একটি মস্তবড় ভুলের উপর মানুষ বিশ্বাস করে গেছে প্রায় হাজার বছর। বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল ছিলেন খৃষ্টপূর্ব সময়ের একজন গণ্যমাণ্য ব্যক্তি। জ্ঞান-বিজ্ঞানে তৎকালীন সময়ে তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন উচ্চতায়। সে সময় মানুষ এতটা শিক্ষিত ছিল না। গবেষণা তো বহুত দূরের কথা! তখন তিনি গবেষণা করে বের করতেন নতুন নতুন জিনিষ। দেশের রাজাও জানতো এই খবর। তাই কখনো কখনো রাজদরবারেও ডাক পড়তো তার। তখনকার সময়ে মানুষ বিশ্বাস করতো পৃথিবী চ্যাপ্টা থালার মতো।

প্রাচীনকালের মহাবিশ্ব

প্রাচীনকালের মহাবিশ্বে অ্যারিষ্টটলের আবিষ্কার

বিজ্ঞানী অ্যারিষ্টটল সর্বপ্রথম এই ভুল ভাঙ্গলেন। তিনি বললেন ভিন্ন কথা। পৃথিবী গোলাকার। চ্যাপ্টা নয়। মানুষ জানতে চাইলো কিভাবে? প্রমাণসহ তিনি দেখালেন। প্রমাণ কি? তা হলো, চন্দ্রগ্রহণ। কিভাবে? অ্যারিস্টটল বললেন, সূর্য আর চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী এসে পড়ে বলেই চন্দ্রগ্রহণ হয়। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর যে ছাঁয়া চাঁদের উপর পড়ে, সেই ছায়াকে তো গোলাকার দেখা যায়। কখনো লম্বাটে হয় না আবার উপবৃত্তকারও হয় না। যদি পৃথিবী চ্যাপ্টা হতো তাহলে এই ছাঁয়া উপবৃত্তকার হতো, গোলাকার নয়। এটা হলো অ্যারিস্টটলের প্রথম যুক্তি। আরেকটা চমৎকার যুক্তিও দেখিয়েছিলেন

সালামের ফযিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

তিনি। সেটা হলো ধ্রুবতারা। ধ্রুবতারা সবসময় আকাশের একই জায়গায় থাকে। ধ্রুবতারা থাকে উত্তর মেরুবিন্দুর ঠিক উপরে। তাই উত্তর মেরু থেকে কোনো পর্যবেক্ষক যদি দেখেনে, তিনি সবসময় মাথার উপরেই দেখবেন ধ্রুবতারাকে।কিন্তু কেউ যদি দেখেন বিষুবরেখা থেকে, তিনি দেখবেন ঠিক দিগন্তরেখায় অবস্থান করছে ধ্রুবতারা।

সেকালে এক দেশে থেকে অন্য দেশে যাতায়াত করতেন বণিক এবং ব্যবসায়ীরা। তারা দিক ঠিক করতেন ধ্রুবতারা দেখে। তাদের কাছ থেকেই জানা যেত কোন দেশে ধ্রুবতারার অবস্থান কোথায়। গ্রীকরা জানতো, উত্তরদিকের দেশগুলো থেকে দেখলে এই তারাকে আকাশের অনেক উপরে দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণদিক থেকে দেখলে একে নিচের  আকাশে দেখা যায়। ধ্রুবতারার অবস্থানের এই তারতম্য থেকেও পৃথিবীর গোলাকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এই যুক্তি দ্বারা মানুষ মানতে বাধ্য হলো, পৃথিবী চ্যাপ্টা নয়। বরং গোলাকার।

প্রাচীনকালের মহাবিশ্বে অ্যারিষ্টটলের ভ্রান্ত বিশ্বাস

কিন্তু সমস্যা বাঁধলো অন্য জায়গায়। অ্যারিস্টটল এই বড় একটা জিনিষ আবিষ্কার করেও কিছু বিষয় তিনি ভিন্ন মতামত দিলেন। ফলে সেই সঠিক মতামতটি প্রতিষ্ঠা করতে উদীয়মান কয়েকজন বিজ্ঞানীর জীবন দিতে হলো। তাদের মধ্যে জিওর্দানো ব্রুনো এবং গ্যালিলিও অন্যতম।

অ্যারিস্টটল বললেন, পৃথিবী হলো মহাবিশ্বের কেন্দ্র। সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র-উপগ্রহ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। সেকালে তার কথাকে প্রতিবাদ করার মতো লোক ছিল না। কারণ তিনি এত বড় একজন গণ্যমাণ্য ব্যক্তি। তার কথা কি ফেলে দেয়া যায়? কিন্তু তারপরও তো কিছু ব্যক্তি থাকে। যারা কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারে না। তেমনই একজন ব্যক্তি ছিলেন অ্যারিস্টার্কাস। তিনি বলেছিলেন সম্পূর্ণ উল্টো কথা। বললেন, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়।

?? গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন ??

 কিন্তু তার কথাকে আমলে নেয় নি তৎকালীন সময়ের জ্ঞানীগুণীরা। ফলে তার তথ্য বাতিল বলে গণ্য হয়।

প্রাচীনকালের মহাবিশ্বে টলেমির উত্থান  

প্রথম শতকের খিষ্টাব্দে আরেকজন ব্যাক্তির আবির্ভাব হলো। নাম টলেমি। সে এসে আরো জোরেশোরে প্রচার করতে লাগলো অ্যারিস্টলের তথ্য। তিনি মহাবিশ্বের ছোটোখাটো একটি মডেল তৈরী করলেন। সেই মডেলে দেখানো হলো পৃথিবী কিভাবে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হলো। আর অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র এবং উপগ্রহগুলো কিভাবে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে। সে সময়ের মানুষ এই মতকে গ্রহণ করলো। বাড়তে লাগলো অ্যারিস্টটল এবং টলেমির জনপ্রিয়তা।

আপনার ফেইসবুক আইডি হ্যাক হওয়া এড়াতে জানুন বিস্তারিত

প্রাচীনকালের মহাবিশ্বে টলেমির বিরুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহ

ষোড়শ শতাব্দীতেই সর্বপ্রথম এই মতবাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসেন একজন পোলিশ ব্যক্তি। নাম কোপার্নিকাস। তিনি পৃথিবীকেন্দ্রিক মডেলের বিরুদ্ধে মত দিলেন। বললেন, পৃথিবীর চারপাশে গ্রহ-নক্ষত্র ঘুরছে না। বরং পৃথিবীই সূর্যের চারপাশে ঘুরছে।

তিনি তখন লিখে ফেললেন একটি বই। নাম, ডি রেভল্যুশনিবাস অরবিয়াম কলেস্তাম। সেখানে তিনি ব্যাখ্যা করলেন, কেন অ্যারিস্টটল এবং টলেমির তথ্য ভুল।কিন্তু বইটি তিনি তখন প্রকাশ করলেন না। জানেন যে, এর জন্য তিনি খৃষ্টান পাদ্রীদের তোপের মুখে পড়বেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৩ বছর পর প্রকাশ করা হলো সেই গ্রন্থটি। তখন চলছিল ১৫৪৩ সাল। কোপার্নিকাস যখন প্রকাশকের হাতে বইটি দিলেন তখন প্রকাশক তাকে না জানিয়েই বইয়ে একটা বাক্য বৃদ্ধি করে দিলেন। তাতে লেখা ছিল, গ্রহ নক্ষত্রের চলাচল ব্যাখ্যা করার জন্য এই সূত্র কাজে লাগে, আদতে এই তথ্যগুলো সঠিক নয়।

এই ঘটনার এক বছরের মধ্যেই কোপার্নিকাস মারা যান। কিন্তু তার বইটি রেহাই পায় নি। সেটাকে নিষিদ্ধ করা হয় তখন। এভাবেই সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। হয়তো সেই সূর্যকেন্দ্রিক মহাবৈশ্বিক মডেলটি হারিয়েই যেতো। কিন্তু সেটাকে আবার বাচিঁয়ে তুললেন জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান কেপলার। সে সময় প্রাদ্রীরা তার পিছনেও লাগলো। কিন্তু প্রাগের সম্রাট রোদলফ কেপলারকে স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দিলেন। কিন্তু বিপদে পড়লেন গ্যালিলিও।

গ্যালিলিওর তথ্য এবং গ্যালিলিওর প্রতি নির্যাতন

গ্যালিলিও তখন ইতালির একজন সাধারণ নাগরিক। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি জানলেন অ্যারিস্টটল এবং টলেমির মতবাদের কথা। সেই সাথে এটাও জানলেন, কোপার্নিকাস এবং কেপলারের তথ্যের কথা। তখন তিনি নিজেই এ বিষয়ে গবেষণা শুরু করলেন। কিছুদিন পরে তিনি আবিষ্কার করেন, বৃহস্পতি গ্রহকে ঘিরে ঘুরছে কয়েকটি উপগ্রহ।

এই তথ্য ছিল অ্যারিস্টটল তথ্যের বিরোধী। কারণ অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, পৃথিবী ব্যতিত অন্য কোনো গ্রহের উপগ্রহ থাকতে পারে না। ফলে তিনিও পাদ্রীদের চক্ষুশূলে পরিণত হলেন। তখনই ঘটলো আরেক ঘটনা। প্রাদ্রীদের মধ্যে তখন নতুন একজনের আবির্ভাব হলো। বয়সে তরুণ। নাম জিওর্দানো ব্রুনো। তিনিও বললেন, সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে গ্রহ-উপগ্রহগুলো। প্রাদ্রীসমাজ তো এবার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো।

আমাদের মধ্য থেকেই কিনা একজন অবাধ্য পাপিষ্ঠের জন্ম হলো? আর ঠিক থাকতে পারলেন না তারা। প্রাদ্রীদের প্রধান পোপ ভ্যাটিকান থেকেই এসে পড়লেন এই নরাধমকে শাস্তি দিতে।

মোনাজাত কবুল হওয়ার জন্য বাংলা দোয়াগুলো পড়ুন বিস্তারিত

প্রাচীনকালের মহাবিশ্বে প্রথম শহীদ বিজ্ঞানী

১৭ই ফেব্রুয়ারী ১৬০০। বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটি ঘোর কালো অধ্যায় হয়ে আছে। ইতালির রাজধানী রোমের ক্যাম্পে ডি ফিওরি স্কয়ার লোকে লোকারণ্য হয়ে আছে। সবাই দেখতে এসেছে । বড়ই নিষ্ঠুর তামাশা। একজন ধর্মাদ্রোহীকে আগুনে পুড়িঁয়ে মারা হবে। আনা হলো সেই ব্যক্তিকে। তিনি আর কেউ নন, স্বয়ং জিওর্দানো ব্রুনো। তরুণ পাদ্রী।

ভ্যাটিকানের প্রধান পোপের নির্দেশে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয় জিওর্দানো ব্রুনোর শরীরে। অল্প কিছুক্ষণ পরেই মারা যান তিনি। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লো গোটা ইউরোপজুড়ে। জানতে পারলেন গ্যালিলিওও। বুঝলেন তার জন্য সামনে কঠিন দিন অপেক্ষা করছে। সৈন্য পাঠিয়ে গ্যালিলিওকে গ্রেপ্তার করে আনা হলো। বিচার করা হলো তার। শাস্তি নির্ধারণ হলো দশ বছরের কারাদণ্ড। অতঃপর কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন এই বিজ্ঞানী।

লিন্যাক্স অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে এখনি বিস্তারিত জানুন

আজ আমরা এই তথ্য সকলেই জানি, সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আমাদের পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহগুলো। শুরুতে কিন্তু এই বিষয়টা এত সহজ ছিল না। এই তথ্যের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে জানা, না-জানা অনেককে। এই কঠিন সত্যটি মানুষের থেকে আড়াল করা হয়েছে হাজার বছরের বেশি সময় ধরে। তাই সকল বিজ্ঞানীর প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা। সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে তাদের প্রতি আশীর্বাদ!!

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join ৫০৬ other subscribers

এছাড়াও আমাদের প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন।

SS IT BARI- ফেসবুকগ্রুপেযোগদিয়েপ্রযুক্তিবিষয়কযেকোনোপ্রশ্নকরুনঃএখানেক্লিককরুন

SS IT BARI- ফেসবুকপেইজলাইককরেসাথেথাকুনঃএইপেজভিজিটকরুন
SS IT BARI- ইউটিউবচ্যানেলসাবস্ক্রাইবকরতেএএখানেক্লিককরুনএবংদারুণসবভিডিওদেখুন।
গুগলনিউজে SS IT BARI সাইটফলোকরতেএখানেক্লিককরুনতারপরফলোকরুন।
SS IT BARI-সাইটেবিজ্ঞাপনদিতেচাইলেযোগাযোগকরুনএইলিংকে

 

বাংলাদেশের সবচাইতে বড় উদীয়মান প্রশ্ন এবং উত্তরের বাংলা ওয়েবসাইট এবং ইনকাম করার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম US IT BARI। আপনি এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বাংলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রশ্ন এবং উত্তর করে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রতিমাসে ঘরে বসে ভালো মানের ইনকাম করতে পারবেন। তাই এখুনি আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলুন এবং জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি ইনকাম করুন।

এ্যাকাউন্ট করতে এবং আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- www.usitbari.com

SANAUL BARI

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *