প্রথম শিয়া খলিফা উবায়দুল্লাহ মাহদী – আব্দুর রহমান আল হাসান

প্রথম শিয়া খলিফা উবায়দুল্লাহ মাহদী – উবায়দুল্লাহ মাহদী হলো ইরাকী বংশদ্ভূত একজন ব্যক্তি। ২৬০ হিজরীতে কুফায় জন্মগ্রহন করে সে। জন্মের পর থেকেই সে উত্তর শামে অবস্থান করে। সেখানে তার নাম ছিল, সাঈদ ইবনে আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে মায়মূন আল কাদ্দাহ। সালামিয়া শহরে মৃত্যুবরণ করে আলি বিন হাসান বিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন জাফর সাদেক। ইসমাঈলিরা তার নামে অনেকগুলো মাজার প্রতিষ্ঠা করে।

আবু আব্দুল্লাহ

উবায়দুল্লাহ মাহদীর বংশ;

উবায়দুল্লাহ মাহদী সিদ্ধান্ত নেয়, আধ্যাতিক বিবাহের মাধ্যমে ইসমাইল বিন জাফর সাদেকের বংশের নিসবত সে গ্রহন করবে। এটাই হলো, উবায়দুল্লাহ মাহদীর প্রথম প্রতারণার অংশ।

মরক্কোরসহ আরো অনেক মুসলিম মনিষীরা উবায়দুল্লাহর এই বংশীয় নিসবতের বিরোধিতা করেছেন। তাদের মাঝে সর্বপ্রথম হলো আলি রা. এর বংশের মহান ব্যক্তিগণ।

উবায়দুল্লাহ মাহদী ২৯৮ হিজরীতে উত্তর আফ্রিকার অনেকগুলো এলাকা দখল করে এবং আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ীর দখলকৃত অঞ্চলসহ নতুন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। সে মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এই সাম্রাজ্যের নাম রাসূলের কন্যা ফাতেমা রা. এর দিকে নিসবত করে “আদ দাওলাতুল ফাতিমিয়্যাহ” বা ফাতেমী সাম্রাজ্য নামে নামকরণ করে।

এই প্রতারক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আব্বাসী খেলাফত নির্মূলের চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে তারা এতদিন বনু মিদরার সাম্রাজ্য, রুস্তম সাম্রাজ্য ও তিউনিসিয়ার আগালিবা সাম্রাজ্য ধ্বংস করার পর থেকেই তারা নিজেদেরকে শক্তিশালী ভাবতে শুরু করে। ২৯৭ হিজরী মোতাবেক ৯১০ খৃষ্টাব্দে কায়রাওয়ানে মাহদীর বাইয়াত সম্পন্ন হয়।

বাতেনী শিয়াদের উত্তর আফ্রিকায় খাঁটি স্থাপন কিভাবে করলো, জানতে পড়ুন

যেহেতু আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী পূর্বেই আগালিবা সাম্রাজ্যে ছিল এবং সে উক্ত সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে সেই সাম্রাজ্য ধ্বংস করতেও সক্ষম হয়েছিল তাই প্রায় ১০ বছর আগালিবা সাম্রাজ্যের এলাকাসহ আরো কিছু এলাকা আবু আবদুল্লাহর হস্তগত ছিল। এরপর সেই অঞ্চল সে ফাতেমী সাম্রাজ্যের অধীনে নিয়ে আসে।

উবায়দুল্লাহ ও আব্দুল্লাহর বিরোধ;

ফাতেমী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকেই উবায়দুল্লাহ মাহদী এবং আবু আব্দুল্লাহর মাঝে বিরোধ সৃষ্টি হতে লাগলো। এই বিরোধ ছিল অর্থ-সম্পদকে কেন্দ্র করে। যেহেতু ফাতেমী সাম্রাজ্যের অনেক বড় অংশ আগে আবু আব্দুল্লাহর হাতে ছিল তাই সে নিজেকে সেসব এলাকার সম্পদের হকদার মনে করতো। পাশাপাশি উবায়দুল্লাহ মাহদী অন্যায়ভাবে অনেক সম্পদ আত্মসাৎ করতো। ফলে আবু আব্দুল্লাহর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়।

কারণ আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী বিশ্বাস করতো, উবায়দুল্লাহ মাহদী হলো, প্রতিক্ষিত মাহদী। যখন আবু আব্দুল্লাহর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়, উবায়দুল্লাহ প্রতিক্ষিত মাহদী নয় তখন থেকে তার সাথে উবায়দুল্লাহর বিরোধ শুরু হয়।

এই কল্পিত ফাতেমী সাম্রাজ্য তাদের নসব বা বংশ প্রমাণের জন্য যারাই উঠেপড়ে লেগেছে, তাদেরকেই তারা হত্যা ও গুম করেছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহ. বর্ণনা করেন, ফাতেমী সাম্রাজ্যের সম্রাটটা নিজেদের ফাতেমা রা. এর বংশের সাথে নিসবত করলেও তারা প্রকৃতপক্ষে শামের সালমিয়া এলাকার ইহুদী বংশোদ্ভূত। কাদ্দাহ ছিল তাদের পূর্বপুরুষের উপাধী। সে ছিল পেশায় চোখের ডাক্তার।

বিখ্যাত “ফাতেমী সাম্রাজ্যের ইতিহাস” গ্রন্থের লেখক ড. আলী মুহাম্মাদ সাল্লাবী বলেন, আবু আব্দুল্লাহ মিয়ায়ীর কাছে যখন এই কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উবায়দুল্লাহ মাহদী একজন ক্ষমতালোভী এবং স্বেচ্ছাচারী ব্যক্তি তখন থেকেই আবু আবদুল্লাহ তার কাছ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার চেষ্টা করে। তখন সে তার অনুসারীদের বুঝাতে থাকে, এ প্রকৃত মাহদী নয়। কিন্তু উবায়দুল্লাহ ছিল আরো বেশি ধুরন্ধর এবং কুটনৈতিকবিদ। তাই সে ই আবু আব্দুল্লাহকে সম্ভবত হত্যা করে তার থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে।

উবায়দুল্লাহ মাহদী তার শাসন ক্ষমতায় ধারাবাহিকভাবে বহাল থাকার পর ৩২২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করে। সে ২৫ বছর কয়েক মাস ক্ষমতার মসনদে থাকে।

শিয়াদের দল সমূহের পরিচয় জানতে পড়ুন

উবায়দুল্লাহ মাহদী তার ভ্রান্ত দাবীর উপর নির্ভর করে নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে। এমনকি আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী তার ব্যাপারে আস্তে আস্তে নির্ভরতা কমাতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত আবু আব্দুল্লাহ হয়তো বিদ্রোহ করতে গিয়েও করতে পারে নি। তিনি একটা ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে জীবেন কিছুই অর্জন করতে পারলেন না। তার থেকে তিনি যদি তার দখলকৃত এলাকাসহ আব্বাসী খেলাফতের সাথে যুক্ত হতেন আর ভালো আকীদা লালন করতেন তাহলে তিনি আজকে ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকতেন। আর চির অমর হয়ে থাকতেন। কারন আবু আব্দুল্লাহ মানুষকে আকর্ষণ করতে পারতেন এবং ভালো শিক্ষক ছিলেন।

এই হলো সংক্ষিপ্ত আকারে শিয়াদের প্রথম খলিফা, ফাতেমী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বা রাফেযী খলিফা উবায়দুল্লাহ মাহদীর সংক্ষিপ্ত জীবনী।

পাশাপাশি ফাতেমী সাম্রাজ্যের অন্যতম সহায়ক আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী র শেষ জীবনে অনুশোচনা এবং জীবনের পরিসমাপ্তি। আমার আবু আব্দুল্লাহর মৃত্যু তারিখ জানা নেই। তাই এখানে উল্লেখ করতে পারছি না।

আগামী পর্বে আমরা উবায়দিয়া সাম্রাজ্য বা ফাতেমী সাম্রাজ্যের সাথে উত্তর আফ্রিকার গোত্রসমূহের বিরোধ নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।

আল্লাহ আমাদের সকল ফেতনা থেকে হেফাজত করুন।

আমীন।

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 506 other subscribers

এছাড়াও আমাদের প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন।

SS IT BARI- ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যে কোনো প্রশ্ন করুনঃএখানে ক্লিক করুন

SS IT BARI- ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃএই পেজ ভিজিট করুন
SS IT BARI- ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এএখানে ক্লিক করুনএবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতেএখানে ক্লিক করুনতারপর ফলো করুন।
SS IT BARI-সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনএই লিংকে

স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ইংলিশে সকল সঠিক তথ্য জানতে আমাদের SS IT BARI- ভালোবাসার টেক ব্লকের আরেকটি সংস্করণ, US IT BARI- All About Healthy Foods ওয়েব সাইট টি ভিজিট করতে পারেন।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন –

www.usitbari.com

 

SANAUL BARI

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি মো:সানাউল বারী।পেশায় আমি একজন চাকুরীজীবী এবং এই ওয়েবসাইটের এডমিন। চাকুরীর পাশাপাশি গত ১৪ বছর থেকে এখন পর্যন্ত নিজের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করছি এবং নিজের ইউটিউব এবং ফেসবুকে কনটেন্ট তৈরি করি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য -লেখার মধ্যে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে অবশ্যই ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment