আয়াতুল কুরসীর ফযিলত – আব্দুর রহমান আল হাসান

আয়াতুল কুরসীর ফযিলত – একবার মেশকাতুল মাসাবীহ কিতাবে একটা হাদীস পড়েছিলাম। হাদীসের মর্থার্থ এবং বক্তব্য আমাকে অবিভূত করেছে। ছোটবেলা থেকেই আয়াতুল কুরসীর যেই ফযিলত আর সওয়াব শুনেছিলাম, মনে হয়েছিল এটাই মনে হয় কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত। সর্বপ্রথমে উক্ত হাদীসটা দিয়ে শুরু করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক রাতে আবু হুরায়রা রা. কে সদকার মালামাল পাহারার জন্য দায়িত্ব দিলেন। আবু হুরায়রা রা. পাহারায় নিয়োজিত ছিলেন। গভীর রাতে হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন,

আয়াতুল কুরসী

একজন সদকার মালামাল চুরি করছে। তিনি সাথে সাথেই তাকে খপ্ করে ধরে ফেললেন। আবু হুরায়রা রা. বললেন, তোমাকে সকালে রাসূলের কাছে নিয়ে যাবো। উক্ত ব্যক্তি তখন বললো, দেখ আমি খুব অভাবী। আমার বাড়িতে কোনো খাবার নেই। তাই আমি বাধ্য হয়ে অসৎ কাজে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তুমি এটা রাসূলকে বলো না। আমি আর কখনো চুরি করবো না।

দান সদকা কেন করা উচিৎ পড়ুন

আবু হুরায়রা রা. ভাবলেন,

যেহেতু সে তওবা করছে তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়া যায়। তাই তিনি তাকে মুক্ত করে দিলেন। সকাল হওয়ার পর আবু হুরায়রা রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আসলো। রাসূল তাকে বললেন, গতকালকের অপরাধী কোথায়?
আবু হুরায়রা রা. বললেন, তাকে মুক্ত করে দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে তোমার নিকট মিথ্যা কথা বলেছে। পরবর্তীতে সে আবার আসবে।
দ্বিতীয় দিন আবু হুরায়রা রা. পুনরায় পাহারার দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাত গভীর হওয়ার পর দেখলেন সেই ব্যক্তিটি আজকেও আবার এসেছে। আবু হুরায়রা রা. তাকে পাকড়াও করলেন। সে তখন আগেরবারের মতো অজুহাত দিতে লাগলো্ বলতে লাগলো, আমি অভাবী। আমার বাড়িতে কোনো খাবার নেই। আমাকে ছেড়ে দাও। আমি শপথ করছি, আর কখনো আমি এখানে আসবো না। আবু হুরায়রা রা. তাকে মুক্ত করে দিলেন।
সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আবু হুরায়রা রা. আসার পর তিনি বললেন, অপরাধী কোথায়? আবু হুরায়রা রা. বললেন, তাকে ছেড়ে দিয়েছি। সে খুব অভাবী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে এবারও তোমার নিকট মিথ্যা বলেছে।
তৃতীয়দিন আবু হুরায়রা রা. পাহারার দায়িত্বে আগের মতো নিয়জিত ছিলেন। গভীর রাতে সেই ব্যক্তিটি আবার আসলো। এবার আবু হুরায়রা রা. তাকে ধরে বললেন, আজকে আর তোমার রক্ষা নেই। আজকে তোমাকে রাসূলের কাছেই নিয়ে যাবোই যাবো। আগন্তুক যখন দেখলো, আজকে আর তার রক্ষা নেই তাই সে আবু হুরায়রা রা. কে বললো, ‘আমাকে মাফ করো। আমি তোমাকে এমন একটা দোয়া বলে দেব, যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাকে কল্যাণ দান করবেন।’

আজকেই কেন তওবা করবেন: পড়ুন

আবু হুরায়রা (রা.) সেটা জানতে চাইলে চোর বলে, ‘যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তুমি আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবে, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করবেন, যে তোমার সঙ্গে থাকবে আর কোনো শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ এটা শুনে আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দিলেন।
পরদিন রাসুল (সা.) আবার অপরাধীর কথা জানতে চাইলে তিনি আগের রাতের কথা বললেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘যদিও সে চরম মিথ্যাবাদী কিন্তু সে সত্য বলেছে।’ রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)–কে বললেন, ‘তুমি কি জানো সে কে?’ আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, ‘না’। রাসুল (সা.) আবু হুরায়রা (রা.)–কে বললেন, ‘সে হচ্ছে শয়তান।’

আমরা এবার কুরআনে বর্ণিত আয়াতুল কুরসীর তরজমা এবং তাফসীর দেখি।

“আল্লাহ; তিনি ব্যতীত অন্য কোনো (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্ত তাঁরই। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত আছেন। যা তিনি ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর কুরসী আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। আর সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনি সুউচ্চ, মহামহিম।”
এখানে আমরা একটু খেয়াল করি। আল্লাহ তা’আলা প্রথম বাক্যে বলছেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই। সর্বপ্রথমই তিনি আমাদের এই আয়াতে শিক্ষা দিলেন তোমাদের রব একজনই। তারপর তিনি বলছেন, তিনি চিরঞ্জিব। এর দ্বারা তিনি আমাদের এই বিশ্বাস গেঁথে দিলেন, আল্লাহ চিরঞ্জিব। কিন্তু বান্দা চিরঞ্জিব নয়। আল্লাহ অসীম। কিন্তু বান্দা অসীম নয়।
এরপর তিনি বলছেন, কে আছে যে তার অনুমতি ছাড়া তার কাছে সুপারিশ করবে? এতে বুঝা যায় যে, যখন আল্লাহ্ তা’আলা যাবতীয় সৃষ্ট বস্তুর মালিক এবং কোন বস্তু তার চাইতে বড় নয়, তাই কেউ তার কোন কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করার অধিকারী নয়। তিনি যা কিছু করেন, তাতে কারো আপত্তি করার অধিকার নেই। তবে এমন হতে পারত যে, কেউ কারো জন্য সুপারিশ করে, তাই এ বিষয়টিও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, এ ক্ষমতাও কারো নেই।
তবে আল্লাহর কিছু খাস বান্দা আছেন, যারা তার অনুমতি সাপেক্ষে তা করতে পারবেন, অন্যথায় নয়। হাদীসে এরশাদ হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হাশরের ময়দানে সর্বপ্রথম আমি সুপারিশ করব। [মুসলিমঃ ১৯৩] একে ‘মাকামে-মাহমুদ’ বলা হয়, যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাস। অন্য কারো জন্য নয়।

তারপর আল্লাহ বলছেন, তার সামনে এবং পেছনে যা কিছু আছে সকল কিছু সম্পর্কে তিনি অবগত। অগ্র-পশ্চাত বলতে এ অর্থও হতে পারে যে, তাদের জন্মের পূর্বের ও জন্মের পরের যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলী আল্লাহর জানা রয়েছে। আর এ অর্থও হতে পারে যে, অগ্র বলতে সে অবস্থা বোঝানো হয়েছে যা মানুষের জন্য প্রকাশ্য, আর পশ্চাত বলতে বোঝানো হয়েছে যা অপ্রকাশ্য।

তাতে অর্থ হবে এই যে, কোন কোন বিষয় মানুষের জ্ঞানের আওতায় রয়েছে কিন্তু কোন কোন বিষয়ে তাদের জ্ঞান নেই। কিছু তাদের সামনে প্রকাশ্য আর কিছু গোপন। কিন্তু আল্লাহর ক্ষেত্রে সবই প্রকাশ্য। তার জ্ঞান সে সমস্ত বিষয়ের উপরই পরিব্যপ্ত। সুতরাং এ দুটিতে কোন বিরোধ নেই। আয়াতের ব্যাপকতায় উভয়দিকই বোঝানো হয়।
তারপর তিনি বলছেন, মানুষ ও সমগ্র সৃষ্টির জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের কোন একটি অংশবিশেষকেও পরিবেষ্টিত করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যাকে যে পরিমাণ জ্ঞান দান করেন শুধু ততটুকুই সে পেতে পারে। এতে বলা হয়েছে যে, সমগ্র সৃষ্টির অণু-পরমাণুর ব্যাপক জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের আওতাভুক্ত, এটা তার বৈশিষ্ট্য। মানুষ অথবা অন্য কোন সৃষ্টি এতে অংশীদার নয়।

আল্লাহ কিভাবে আপনাকে রিযিক দান করেন : পড়ুন 

এরপর বলছেন, তার কুরসী এত বড় যার মধ্যে সাত আকাশ ও যমীন পরিবেষ্টিত রয়েছে। হাদীসের বর্ণনা দ্বারা এতটুকু বোঝা যায় যে, আরশ ও কুরসী এত বড় যে, তা সমগ্র আকাশ ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে রেখেছে। ইবনে কাসীর আবু যর গিফারী রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর উদ্ধৃতিতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, কুরসী  কি এবং কেমন?

তিনি (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার কছম, কুরসীর সাথে সাত আসমানের তুলনা একটি বিরাট ময়দানে ফেলে দেয়া একটি আংটির মত। আর কুরসীর উপর আরশের শ্রেষ্ঠত্ব যেমন আংটির বিপরীতে বিরাট ময়দানের শ্রেষ্ঠত্ব। [ইবন হিব্বান: ৩৬১ বায়হাকী: ৪০৫]

পরের বাক্যে  আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষে এ দুটি বৃহৎ সৃষ্টি, আসমান ও যমীনের হেফাজত করা কোন কঠিন কাজ বলে মনে হয় না। কারণ, এই অসাধারণ ও একক পরিপূর্ণ সত্তার পক্ষে এ কাজটি একান্তই সহজ ও অনায়াসসাধ্য।

অর্থ বুঝে কেন নামায পড়বেন: পড়ুন

শেষের বাক্যে তিনি অতি উচ্চ ও অতি মহান। পূর্বের নয়টি বাক্যে আল্লাহর সত্তা ও গুণের পূর্ণতা বর্ণনা করা হয়েছে। তা দেখার এবং বোঝার পর প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি বলতে বাধ্য হবে যে, সকল শান-শওকত, বড়ত্ব ও মহত্ব এবং শক্তির একমাত্র মালিক আল্লাহ তা’আলা। এ দশটি বাক্যে আল্লাহর যাত ও সিফাতের পূর্ণ বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
(সুত্র, হাদীস বিডি ডট কম)

হাদীসে আয়াতুল কুরসী সম্পর্কিত কিছু আমল রয়েছে সেসব আপনারা করতে পারেন। যেমন, সকাল-সন্ধা আয়াতুল কুরসী পড়া। প্রত্যেক নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়া। রাসূলের একটা হাদীস রয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি প্রত্যেক নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পড়ে এবং সে এই অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে জান্নাত লাভ করবে।
পরিশেষে আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের সকলকে উক্ত সকল আয়াতের আকীদার উপর পূর্ণ বিশ্বাসী রাখেন এবং আমাদের ইসলামের খাদেম হিসেবে কবুল করেন।
আমীন।

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join 505 other subscribers

এছাড়াও আমাদের প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন।

SS IT BARI- ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যে কোনো প্রশ্ন করুনঃএখানে ক্লিক করুন

SS IT BARI- ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃএই পেজ ভিজিট করুন
SS IT BARI- ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এএখানে ক্লিক করুনএবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতেএখানে ক্লিক করুনতারপর ফলো করুন।
SS IT BARI-সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনএই লিংকে

 

বাংলাদেশের সবচাইতে বড় উদীয়মান প্রশ্ন এবং উত্তরের বাংলা ওয়েবসাইট এবং ইনকাম করার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম US IT BARI। আপনি এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম বাংলা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রশ্ন এবং উত্তর করে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রতিমাসে ঘরে বসে ভালো মানের ইনকাম করতে পারবেন। তাই এখুনি আপনি আমাদের ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলুন এবং জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি ইনকাম করুন।

এ্যাকাউন্ট করতে এবং আরও বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- www.usitbari.com

 

Leave a Comment