বাতেনীদের উত্তর আফ্রিকায় ঘাঁটি স্থাপন – আব্দুর রহমান আল হাসান

বাতেনীদের উত্তর আফ্রিকায় ঘাঁটি স্থাপন – ইয়ামান অঞ্চলকে ইসমাঈলী শিয়া মতবাদের প্রচারকেন্দ্র হিসেবে প্রথম স্থানে ধরা হতো। কারণ, সে সময় ইয়ামান আব্বাসীয় খেলাফতের ‍দৃষ্টি থেকে দূরে ছিল। এখান থেকেই তারা গোপনে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করে। রুস্তম ইবনে হাওশার নামে এক লোক ইয়ামানে উক্ত সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহন করে। সে তার দলে পারসিকদের টানতে সক্ষম হয়। যে পারসিকরা ছিল মুসলমানদের চরম শত্রু। তার কাছে পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশসমূহকে শিয়া মতবাদ প্রচারের জন্য উর্বরভূমি মনে করা হয়। ইয়ামান থেকে সে তিউনিশিয়ায় তার কিছু অনুসারীকে শিয়া মতবাদ প্রচারের জন্য প্রেরণ করে।

আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী

রুস্তম ইবনে হাওশার শিয়া  মতবাদ প্রচারের জন্য ইয়ামানে আবু আব্দুল্লাহকে দায়িত্ব প্রধান করে। সে ছিল ইয়ামানের রাজধানী সানাআর অধিবাসী। আবু আব্দুল্লাহর নেতৃত্বের গুণাবলি ছিল সুস্পষ্টভাবে। সে বিচারবুদ্ধিতেও পারদর্শী ছিল। পাশাপাশি আবু আব্দুল্লাহ মোটিভেশন বা কথার মাধ্যমে মানুষকে কাছে টানতে পারতো।

শিয়াদের উল্লেখযোগ্য দলের পরিচয় জানতে পড়ুন

এই আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ীকে ইয়ামানে ইসমাঈলী সাম্রাজ্য বা রাফেযী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মনে করা হয়। শিয়া মতাদর্শের দুইজন প্রচারক আবু সুফিয়ান ও হালওয়ানীর মৃত্যুর পর আবু আব্দুল্লাহকে শিয়া মতবাদের প্রচারকের দায়িত্ব দিয়ে উত্তর আফ্রিকার মরক্কোতে প্রেরণ করা হয়। তাকে মরক্কোতে পাঠানো হয় এক হঠকারিতার মাধ্যমে।  ২৮৮ হিজরীতে আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী হজ্জ্বের জন্য মক্কায় আসে। সে তখন মক্কায় হজ্জযাত্রীদের সাথে দেখা করে। তাদের সাথে বড় আলেম হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে সে মরক্কোর কাত্তান অঞ্চলের শায়েখদের মন জয় করে নেয়। তখন কাত্তানী শায়েখরা তাকে মরক্কো যেতে অনুরোধ করে। তখন সে সেই শায়েখদের সাথে করে মরক্কোতে যায়।

আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী মরক্কোতে পৌঁছে প্রথমত তিন কাজ করে। ক) আগালিবা সাম্রাজ্যের দুর্বল জায়গা চিহ্নিত করা। খ) মরক্কোর গোত্রগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানা। গ) মরক্কোতে প্রবেশেদ্বারগুলো সম্পর্কে জানা।

জীবদ্দশায় সে একজন দুনিয়াবিমুখ সমাজ সংস্কারক ও মুত্তাকী ব্যক্তির ভাব ধারণ করে। এর দ্বারা সে মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়। তার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায় সে ধীরে ‍ধীরে রাজনীতিতে আসতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সে নিজের অবস্থান তৈরী করে নেয়। সে তখন তার মতবাদ প্রচার করার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে যায়। পূর্ব থেকেই আগালিবা গোত্রের দ্বারা নিপীড়িত মানুষকে সে টার্গেট করে।

সুযোগ বুঝে আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী নির্যাতিতদের শিয়া দীক্ষায় দিক্ষিত করে। তারা আবু আব্দুল্লাহকে নিজেদের মুক্তিদাতা মানতে শুরু করে। আগালিবা গোত্র যখন দেখলো, মানুষ দলে দলে আবু আব্দুল্লাহর কাছে জমায়েত হয়ে তাকে নেতা হিসেবে মেনে নিচ্ছে তখনই তাদের টনক নড়ে। সংঘর্ষ শুরু হয় আগালিবা গোত্র আর আবু আব্দুল্লাহর মাঝে। এক পর্যায়ে সে আগালিবাদের পরাজিতে করতে সক্ষম হয়। তবে সেটা পুরোপুরি পরাজয় ছিল না। এই যুদ্ধের মাধ্যমে আগালিবাদের প্রতাব-প্রতিপত্তি কমে যেতে থাকে।

আবু আব্দুল্লাহও এমন সময় মানুষের নিকট প্রচার করা শুরু করে, আগালিবাদের শাসনকার্য শরীয়ত বহির্ভূত। এর ফলে আগালিবাদের মধ্যকার পুরোনো বিরোধ আবু আব্দুল্লাহ আবার জাগ্রত করে। এর ফলে আগালিবাদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

আবু আব্দুল্লাহ একজন প্রচারক হওয়ার পাশাপাশি তীক্ষ্ন মেধার অধিকারীও ছিল্ তার সমরশক্তি ছিল উচ্চমানের। ফলে সে আগালিবাদের বিরুদ্ধে যেই সাহস, বীরত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সৈন্য নৈপুন্যের পরিচয় দেয়, তাতে তার সঙ্গে থাকা লোকজনের এবং সৈনিকদের মনোবল এবং আস্থা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। এই মুহুর্তকেই আবু আব্দুল্লাহ শিয়া মতবাদ প্রচারের উপযুক্ত সময় মনে করে।

শিয়াদের আত্মপ্রকাশ কিভাবে ঘটে? পড়ুন

২৯৬ হিজরীতে অর্থাৎ ৯০৯ খৃস্টাব্দে আবু আব্দুল্লাহ আরিস শহর হস্তগত করে। এই শহর ছিল ওই অঞ্চলের রাজনৈতিক রাজধানী কায়রাওয়ানের প্রবেশদ্বার। এই বছর শিয়াদের আরেক নেতা যিয়াদাতুল্লাহ মিসরে প্রত্যাবর্তন করে আর আবু আব্দুল্লাহ কায়রাওয়ান প্রবেশ করে।

এই ঘটনার পর আবু আব্দুল্লাহ ঘোষণা করে, ওবায়দুল্লাহ মাহদী হলেন মুসলমানদের প্রকৃত নেতা ও ইমাম। তিনি অতিসত্তর মরক্কোতে পৌছবেন এবং ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। এই কথা শুনে আগালিবদের আরো কিছু নেতা দলসহ ‍আবু আব্দুল্লাহর দরে ভিড়ে। আমরা ওবায়দুল্লাহ মাহদীর ঘটনা পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।

এই সময়টাতে উত্তর আফ্রিকার আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলেমদের সঙ্গে আবু আব্দুল্লাহর বিতর্ক এবং বাহাস অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তি-প্রমাণের আলোকে আবু আব্দুল্লাহ সদুত্তর দিতে না পারায় সে হেরে যায়। ফলে ক্ষিপ্ত হয়ে  আবু আব্দুল্লাহর ছোট ভাই আবুল আব্বাস আহলুস সুন্নাহর আলেম ও অনুসারীদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। তাদের কাউকে হত্যা করে, কাউকে গুম করে, কারো জিহ্বা কেঁটে দেয়। কাউকে অন্ধ করে দেয়। ফলে মানুষের মাঝে বিদ্রোহ দেখা দিলে আবু আব্দুল্লাহ রাজনৈতিক কৌশলে তার ভাইকে দেশান্তর করে এবং সকল ধরণের বিতর্ক-বাহাস অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করে।

২৯৭ হিজরী মোতাবেক ৯১০ খ্রিষ্টাব্দে আবু আব্দুল্লাহ শিয়ায়ী বড় বাহিনী তৈরী করে। এর দ্বারা সে বনু মিদরারকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়। সে উবায়দুল্লাহ মাহদীকে জেল থেকে মুক্ত করে। কারণ, উবায়দুল্লাহ মাহদীর পেছনে আব্বাসীয় খেলাফতের গোয়েন্দারা লেগে থাকতো। তাই তাকে বনু মিদরাররা আটক করতে সক্ষম হয়েছিল। এই যুদ্ধের দ্বারা মধ্য মরক্কোতেও শিয়াদের আধিপত্য বিস্তার ঘটে। এর পরেই শিয়ারা সর্বপ্রথম রাষ্ট্র গঠন করে।

আমরা পরবর্তী পর্বে উবায়দুল্লাহ মাহদীর ইতিহাস ও শিয়াদের প্রথম রাষ্ট্র গঠন সম্পর্কে জানবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকর ফেৎনা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join ৪৭৫ other subscribers

এছাড়াও আমাদের প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন।

SS IT BARI- ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যে কোনো প্রশ্ন করুনঃএখানে ক্লিক করুন

SS IT BARI- ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃএই পেজ ভিজিট করুন
SS IT BARI- ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এএখানে ক্লিক করুনএবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতেএখানে ক্লিক করুনতারপর ফলো করুন।
SS IT BARI-সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুনএই লিংকে

স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ইংলিশে সকল সঠিক তথ্য জানতে আমাদের SS IT BARI- ভালোবাসার টেক ব্লকের আরেকটি সংস্করণ, US IT BARI- All About Healthy Foods ওয়েব সাইট টি ভিজিট করতে পারেন।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন –www.usitbari.com

আব্দুর রহমান আল হাসান

আমি কওমী মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছি। এখন মেশকাত জামাতে অধ্যয়নরত আমি। লেখালেখিতে আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই। প্রায় সময়ই গল্প-উপন্যাস, বিজ্ঞান, ইতিহাস বিষয়ে লেখালেখি করি। লেখালেখির প্রাথমিক হাতেখড়ি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কামরুল হাসান নকীব সাহেবের হাত ধরে। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাই নি। অনলাইন ফ্লাটফর্মে লেখালেখি আমার নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে শুরু করি। এর মধ্যে দু’একটা সুনামধন্য পত্রিকায় লেখার সুযোগ পাই। বর্তমানে এসএস আইটি বারী ডট কমে ইসলামিক বিষয়ক লেখালেখিতে কর্মরত।

অবসরে তাফসীর, সীরাত গ্রন্থ, মুৃসলিম ইতিহাস, পৃথিবীর ইতিহাস, বিজ্ঞান ও বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত বই পড়তে পছন্দ করি। পাশাপাশি নিজের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে গ্রাফিক্স, ওয়েব ডেপলপমেন্ট, এসইও, প্রোগ্রামিং ও মার্কেটিং শেখার চেষ্টা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *