কিডনির রোগীর খাবার-দিন দিন কিডনি রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মানুষের জীবনযাপনে পরিবর্তন, খাদ্যে ভেজাল ও নানাবিধ কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। অনেকের অল্প বয়সেই কিডনি বিকল হয়ে যাচ্ছে।
থাইরয়েড রোগীর খাবার তালিকা এবং থাইরয়েডে নিষিদ্ধ খাবার
কিডনি সমস্যা দেখা দিলে জীবনযাপনে বদল আনতে হবে। খাবার খেতে হবে হিসাব করে। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধিকে ধীর গতিতে রাখার জন্য সঠিক খাবার খাওয়া জরুরি।
পটাশিয়াম যুক্ত খাবার
সঠিক পথ্য মেনে চললে রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রাকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। রোগী ভেদে কিডনির পথ্য নির্ধারণে ভিন্নতা থাকে। রক্তে ইলেকট্রোলাইটসের পরিমাণ, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, ইউরিয়া ও ইউরিক এসিডের পরিমাণ, রক্ত ও ইউরিনে এলবুমিনের পরিমাণ এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ভেদে পথ্যকে সাজাতে হয়। আজ আপনাদের জানাবো কিডনির রোগীর খাবার,কিডনি রোগীরা যেদিকে দৃষ্টি দেবেন,যেসব সবজি খাবেন না এ সব বিষয়ে।
১।সবজি
রক্তে পটাশিয়াম, ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা, ফসফরাস ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে সবজি হিসাব করা হয়। কিডনি সমস্যা দেখা দিলে অতিরিক্ত পিউরিন ও পটাশিয়ামসমৃদ্ধ শাকসবজি, পিচ্ছিল ও গাঢ় লাল রঙের শাকসবজি এড়িয়ে যেতে হবে। কিডনি রোগীদের জন্য চালকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা ইত্যাদি পানীয় সবজি উপকারী। উপকারী হলেও এগুলোর পরিমাণ মেনে চলাও গুরুত্বপূর্ণ। কাঁচাসবজির সালাদ, সবজি স্যুপ ইত্যাদি কিডনি রোগীদের এড়িয়ে চলতে হয়।
২।ফল
অনেকেই কিডনি রোগ হলে ফল খাওয়া বন্ধ করে দেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ ক্ষেত্রে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বিবেচনা করে ফল নির্ধারণ করতে হবে। তবে কিডনি রোগীদের ফল খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হয়। অক্সালিক অ্যাসিড, ইউরিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, রক্তচাপ ছাড়াও আরও অনেক কিছু বিবেচনা করে ফল নির্ধারণ করা হয়। তিন-চারটি ফল রোগী ভেদে সীমিত আকারে দেওয়া হয়। যেমন : আপেল, পাকা পেঁপে, পেয়ারা ইত্যাদি।
৩।লবণ
লবণ বা সোডিয়াম নিয়ন্ত্রিত পথ্য কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে জরুরি। রক্তচাপ, রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা, ইডিমা বা শরীরের পানি পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে লবণের পরিমাপ করা হয়। সাধারণত দুই থেকে পাঁচ গ্রাম লবণ নির্ধারণ করা হয়, যা নির্ভর করবে আপনার শারীরিক অবস্থা ও ডায়েটেশিয়ানের ওপর। আলাদা লবণ গ্রহণ পরিহার করতে হবে এবং অতিরিক্ত সোডিয়ামযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
যেমন— চিপস, পাপড়, চানাচুর, আচার ইত্যাদি, যা শুধু কিডনি রোগীর চিকিৎসায় নয়, কিডনি রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
৪।তরল বা পানীয়
কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে তরল খাবার নিয়ন্ত্রণ জরুরি। চা, দুধ, পানি সব মিলিয়ে তরলের হিসাব করা হয়। কোন রোগীকে কতটুকু তরল বরাদ্দ করা হবে, তা নির্ভর করবে রোগীর অবস্থার ওপর। খুব গাঢ় করে জাল দিয়ে দুধ পান করা যাবে না।
শরীরের ইডিমা, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা, সোডিয়ামের মাত্রা, ইজিএসআর- এসবের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে এক থেকে দেড় লিটার, কখনও কখনও দুই লিটার পর্যন্ত তরল বরাদ্দ হয়। অনেকেই অসুস্থ কিডনিকে সুস্থ করার জন্য অতিরিক্ত পানি খান— এটি ভুল।
কিডনি রোগীরা যেদিকে দৃষ্টি দেবেন
চিচিঙ্গা, লাউ, করলা, বিচি ছাড়া শশা, সজনা, ডাঁটাশাক, লালশাক, কচুশাক, ঝিংগা, পেঁপে, হেলেঞ্চা শাক ইত্যাদি শাক-সবজি খাবেন।
যেসব সবজি খাবেন না
ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাক, কচু, মুলা, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, গাজর, কাঁঠালের বিচি, শিমের বিচি, মুলাশাক ইত্যাদি।
প্রাণিজ আমিষ, যেমন- মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি সীমিত পরিমাণে খাবেন।
ডাব, কলা, আঙুর একেবারেই খাবেন না, কেননা, এতে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি। কিডনি রোগীদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে থাকে।
কম পটাশিয়ামযুক্ত ফল; যেমন— আপেল, পেয়ারা, পাকা পেঁপে, নাসপাতি ইত্যাদি।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন
রোগীর খাদ্যতালিকায় প্রোটিন রাখতে হবে রোগের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে। যেমন- রোগীর রক্তের ক্রিয়েটিনিন, শরীরের ওজন, ডায়ালাইসিস করেন কিনা, করলেও সপ্তাহে কয়টা করেন তার ওপর নির্ভর করে প্রোটিনের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে।
যেমন- কিডনি রোগ শনাক্ত হওয়ার পর প্রতিকেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন ০.৫-০.৮ গ্রাম। গুরুতর রোগীর জন্য ০.৫ গ্রাম।
কিডনি রোগ নিয়ে প্রশ্ন ও উত্তর
১।প্রশ্ন: অনেকেই আছেন যারা কোমড় ব্যথা হলে বা প্রস্রাব হলুদ হলে ভয়ে মনে করেন কিডনি সমস্যা। আসলে কিডনি রোগ হলে এর লক্ষণগুলো কি হবে?
উত্তর: আসলে কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার লক্ষণ যদি বলি তবে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বিকল হওয়ার আগে কোনভাবেই প্রকাশ পায় না। এ অবস্থায় দেখা যায় খাওয়ায় অরুচী, বমি বমি ভাব, মাঝে মাঝে ঘুম থেকে উঠলে চোখ-মুখ ফোলা দেখানো অর্থাৎ চোখের নিচের অংশ বেশি ভারি ভারি হয়ে থাকে। এছাড়া আস্তে আস্তে রক্ত শূণ্যতা দেখা দেয়। চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে আসে।
আরও যদি বেশি ঝুঁকিতে থাকে তবে বিনা কারণে শরীর চুলকাবে, গায়ের রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে। রাতে অনেকবার প্রস্রাব করতে হয়। কারও কারও উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
মোট কথা দেহ তো একটাই। যখন এটি খুব বেশি আক্রান্ত হয় তখন সবগুলো অঙ্গই ধীরে ধীরে জড়িত হয়ে যায়। এ জন্য এই রোগটিকে নিরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার বলা হয়।
২।প্রশ্ন: কিডনি বিকল কি শুধু শুধু হয়?
উত্তর: না। কখনওই শুধু শুধু কিডনি বিকল হবে না। অনেকগুলো রোগের শেষ পরিনতি এটি। সেই রোগগুলো প্রাথমিক অবস্থায় সনাক্ত করা সম্ভব। যেমন ধরুন- প্রস্রাব যদি কখনও কমে যায়। অথবা কারও দেখা যাচ্ছে রাতে প্রস্রাব হতো না এখন হচ্ছে।
প্রস্রাব করার সময় জালাপোড়া হয়। প্রস্রাব করার পরেও কিছু প্রস্রাব থেকে যায়। এর সঙ্গে কোমড়ের দুই পাশে ব্যথা এবং কাপুনি থাকে। আবার দেখা যাচ্ছে প্রস্রাবে প্রচুর ফেনা থাকে। মুখ ফুলে যায় তবে মনে করতে হবে কিডনির প্রদাহ বোঝায়।
আবার দেখা যায় যে প্রস্রাব লাল হচ্ছে অর্থাৎ প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে। তবে এই রক্ত যাওয়া অনেক কারণে হতে পারে যেমন কিডনিতে পাথর থাকলে। টিউমার থাকলে হতে পারে। অনেক কারণেই প্রস্রাবে রক্ত যেতে পারে। অনেক সময় ভিটামিন খেলেও প্রস্রাব হলুদ হতে পারে। আবার পানি কম খেলেও হলুদ হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠলেও প্রস্রাব হলুদ হয়। এটা আসলে কোন রোগ না।
৩।প্রশ্ন: এমন কোন লক্ষণ বা কারণ কি নেই যা দেখে রোগী বুঝবে যে তার কিডনি খারাপের দিকে যাচ্ছে?
উত্তর: খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। অনেকগুলো লক্ষণ বলেছি প্রস্রাব নিয়ে। এছাড়া অনেক সময় কোমড়ে ব্যথা হতে পারে। তলপেটে ব্যথা থাকতে পারে। তবে আমি আগেই বলে রাখি কোমড়ে যে ব্যথা হয় তার ৯০ ভাগই হয় স্পাইন থেকে। আমাদের পেটের পেছনের দিকে কিছু অঙ্গ আছে সেগুলোতে যদি টিউমার বা ক্ষত হয় সেক্ষেত্রেও ব্যথা হতে পারে। তবে সাধারণত ১০ ভাগ করণে কিডনির জন্য হয়ে থাকে।
কিডনিতে যদি পাথর থাকে, টিউমার হয়, প্রস্রাব প্রবাহে কোন বাঁধা সৃষ্টি হয় এ সমস্ত কারণে হতে পারে।
৪।প্রশ্ন: প্রধান কি লক্ষণ দেখলে রোগী বুঝবে যে তার কিডনিতে সমস্যা হয়েছে?
উত্তর: কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে যা গুরুত্বপূর্ণ।
শরীর যদি ফুলে যায়, আর সেই ফোলাটা যদি শুরু হয় মুখমন্ডল থেকে।
প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলোনায় কমে গেলে।
প্রস্রাব যদি লাল হয় বা রক্ত যায়।
কোমড়ের দুই পাশে যদি ব্যথা হয়। এই ব্যথা তলপেটেও হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিলে।
তাছাড়া কিছু রোগ আছে যা থাকলে তাদের অবশ্যই কিডনি পরীক্ষা করে নিতে হবে। যেমন ধরুন: কারও যদি ডায়াবেটিক থাকে, উচ্চ রক্তচাপ থাকে, কখন যদি কারও মুখমন্ড ফুলে গিয়ে থাকে, যদি কারও ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে, এমন কোন মানুষ যদি থাকে যে খুব বেশি হাটাচলা করেন না-বসে বসে কাজ করেন, কোন করণে যার দীর্ঘদিন ব্যথার ঔষুধ খেতে হয়েছে এবং যারা পানি কম পানে অভ্যস্থ, বংশে যদি কারও কিডনি রোগ থাকে এসব ইতিহাস থাকলে বছরে অন্তত দুইবার কিডনি পরীক্ষা করা উচিৎ।
৫। প্রশ্নঃকিডনি রোগ বিরল কি?
উত্তরঃ ২০১৯ সালে কিডনি ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপ থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ হাজারের কিডনি পুরোপুরি অকেজো হচ্ছে প্রতিবছর।
৬। প্রশ্নঃ বেশি বেশি পানি খেলে কিডনি ভালো থাকে?
উত্তরঃ দিনে দুই থেকে আড়াই লিটার পানি খেলেই তা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত গরম কিংবা শারীরিক পরিশ্রম করলে, কোনো ইনফেকশন বা রক্তপাত হলে, গর্ভবতী মহিলাদের এর চেয়ে বেশি পানি খাবার প্রয়োজন হতে পারে
৭। প্রশ্নঃ কিডনি সুস্থ থাকার একটি ভাল লক্ষণ হচ্ছে প্রায়শই প্রস্রাব করা?
উত্তরঃ না, আসলে ব্যাপারটা পুরোপুরি বিপরীত। স্বাস্থ্যকর কিডনিগুলি ২ কাপ পর্যন্ত প্রস্রাবকে ঘনীভূত করতে পারে এবং কার্যকরভাবে শরীরের বর্জ্য অপসারণ করতে পারে। রোগাক্রান্ত কিডনি এটি করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আসলে, ঘন ঘন প্রস্রাব করা একটি অস্বাভাবিকতা টের পাওয়া যায় যা কিডনি রোগের প্রথম লক্ষণগুলির মধ্যে একটি।
অসুস্থ কিডনিগুলি যা ঘন করতে অক্ষম, বর্জ্য পদার্থগুলি অপসারণ না করে প্রচুর পরিমাণে প্রস্রাব উত্পাদন করে। এর ফলে ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং পরবর্তীকালে তৃষ্ণা বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য রোগ যা ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হয় সেগুলির মধ্যে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, প্রোস্টেট সমস্যা এবং হরমোন ভারসাম্যহীনতা।
আপনার জন্য-
যে ভিটামিনের অভাবে বিশ্রাম নিয়েও ক্লান্ত থাকেন
নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যায় বাবা-মার করণীয়
৬ মাস থেকে ৫ বছরের বাচ্চার খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা দিন শেষ
বাচ্চার পুষ্টি নিয়ে ভাবছেন?অধিক পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ বাচ্চার খাবার তালিকা
নবজাতক শিশুর যত্ন ও পরিচর্যায় বাবা-মার করণীয়
SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।
সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!
”
SS IT BARI- ভালবাসার টেক ব্লগ টিম