আশুরার রোজার নিয়ত ।আশুরার রোজার ইতিহাস সহ বিস্থারিত

আশুরার রোজার নিয়ত-মহররম মাস। হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর নিকট মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসের দশম তারিখও মহান আল্লাহর নিকট পূণ্যময়। এদিনটির রয়েছে বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলত। ইসলামের ভাষায় এ দিনটিকে বলা হয় ‘পবিত্র আশুরা’।

আজ আপনাদের আশুরার রোজার নিয়ত, আশুরার রোজা কবে, আশুরার রোজা কয়টি, আশুরার রোজা ফজিলত ও আশুরার রোজা দিনের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।

আরাফার রোজার নিয়ত ।আরাফার রোজা কয়টি।আরাফার রোজার ফজিলত

আশুরার রোজার নিয়ত,

আশুরার রোজার নিয়ত

আশুরা’ শব্দটি আরবি ‘আশারা’ শব্দ থেকে উৎপত্তি। আশারা অর্থ হচ্ছে দশ আর আশুরা অর্থ হল দশম দিবস। এই দিনের গুরুত্বপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো রোজা পালন করা। রাসূল (সা.) এই আশুরার দিন রোজা পালন করতেন। উম্মতদেরকেও এ দিনে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।

আশুরার রোজা সম্পর্কে এক হাদীসে এসেছে যে, ‘তোমরা আশুরার রোজা রাখ এবং ইহুদিদের সাদৃশ্য পরিত্যাগ করে আশুরার আগে বা পরে আরো একদিন রোজা রাখ।’ (মুসনাদে আহমদ ১/২৪১)

ইবনে আব্বাস (রা.) একবার বললেন, হে আল্লাহর নবী! এ দিনটিকে ইহুদিরা সমীহ পূর্বক রোজা রাখে। আমাদের রোজাও তাদের সদৃশ হয়ে যায়। রাসূল (সা.) বললেন, যদি আমি আগামী বছর জীবিত থাকি, তবে নবম তারিখটিকেও দশমের সঙ্গে মিলিয়ে রোজা রাখব, ইনশাআল্লাহ’! পরের বৎসরটি আর আসেনি রাসূল (সা.) এর জীবনে।

স্বপ্নদোষ হলে কি রোজা  ভেঙে যায়? যেনে নিন বিস্থারিত

আশুরার রোজার নিয়ত,

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ইয়াহুদিরা আশুরার একদিন রোজা রাখত। তাদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয় সে দিকে খেয়াল রেখে আশুরার পূর্বের দিন ৯ তারিখ বা পরের দিন ১১ তারিখ অতিরিক্ত একটি রোজা রাখা উত্তম।

ওলামায়ে কেরাম এই ক্ষেত্রে চারটি ধারা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন সর্বোত্তম হলো নয় এবং দশ তারিখ রোজা রাখা। দ্বিতীয় ধাপে বলেছেন ১০ এবং ১১। তৃতীয় ধাপে বলেছেন ৯, ১০, ১১ এই তিনদিন একাধারে এবং চতুর্থ ধাপে বলেছেন সমস্যা থাকলে শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখতে। কারণ রাসুল (সা.) ৯ এবং ১০ তারিখ রোজা রাখার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেছেন। এজন্য অনেকেই বলছেন যে নয়, ১০ রোজা রাখাই উত্তম। কেউ যদি নয় তারিখ রাখতে ব্যর্থ হন, সে ১০, ১১ রাখবেন বা শুধু ১০ তারিখেও মহররমের রোজা রাখতে পারবেন।

আশুরার রোজার ইতিহাস

রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজার ফরজ বিধান রহিত হয়ে তা নফল হয়। রাসূল (সা:) এ নিয়মে রোজা রাখতেন। তিনি যখন হিজরত করে মদিনায় গেলেন তখন রাসূল (সা:) দেখলেন, ইয়াহুদিরা এই দিনে রোজা পালন করছে, রাসূল (সা:) কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, এই দিনে আমাদের নবী হজরত মুসা (আ:) জালেম ফিরাউনের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।

মহরমের রোজা কয়টি?মহরমের রোজার নিয়ত?রোজার ফজিলত

আশুরার রোজার নিয়ত,

তাই আমাদের নবী মুসা (আ:) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্য এ দিন রোজা পালন করতেন। এ জন্য আমাদের নবীর অনুসরণ করে আমরা এই দিনে রোজা পালন করি। তখন রাসূল (সা:) বললেন ‘আমরাই বেশি হকদার মুসা (আ:) এর সঙ্গে সুসম্পর্কের’। তারপর তিনি সাহাবাদেরকেও এ দিনের রোজা রাখার নির্দেশ দেন।

হাদীসের আলোকে আশুরার রোজা

হজরত আয়েশা (রা:) বলেন, ‘জাহেল যুগে এই দিন কুরাইশরা রোজা পালন করতেন। রাসূল (সা:) এদিন রোজা নিজে রেখেছেন এবং সাহাবীদের রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজাকে ইচ্ছাধীন করে দিয়েছেন।’ (বুখারী ১৮৯৮, তিরমিজী ৭৫৩)

আয়শা (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.)-কে আমি দেখিনি কোনো দিনের রোজাকে অন্য দিনের তুলনায় এতটা গুরুত্ব দিতে, আশুরার দিন আর রমাজান ব্যতীত’।

শবে বরাতের রোজা নিয়ত বাংলায় এবং শবে বরাতের নামায

আশুরার রোজার নিয়ত,

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সঙ্গে রোজা রাখতে দেখেছি অন্য সময় তা দেখিনি।’ (সহীহ বুখারী ১/২১৮)

অন্য হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, আশুরার রোজার কারণে আল্লাহ তায়ালা অতীতের এক বছরের (সগীরা) গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সহীহ মুসলিম ১/৩৬৭; জামে তিরমিযী ১/১৫৮)

আশুরার রোজা নিয়ে সাহাবাদের আমল

বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, হজরত ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত, নবী (সা:) আশুরার রোজা রেখেছেন এবং রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন, তবে যখন রমজানের রোজা ফরজ করা হলো তিনি এ নির্দেশ পরিহার করেন। তাই হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তার নির্ধারিত নফল রোজার দিন না হলে আশুরার এ দিনের রোজা রাখতেন না।

এসব হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নবী (সা:) রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার সিয়াম পালনকে নির্দেশ শিথিল করে নেন। এরপর এ দিনের রোজা বাধ্যতামূলক ছিল না। এ দিনের রোজা পালন মুস্তহাব বা সুন্নতের পর্যায়ে রয়ে যায়। তারপরও ওমর ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আউফ আবু মূসা, কায়স ইবনে সাদ, ইবনে আব্বাস প্রমুখ থেকে এ দিনের রোজা রাখা প্রমাণিত হয়। নবী (সা.) তাঁর জীবনের শেষ দিকে এ দিনের সঙ্গে অন্য এক দিনসহ রোজা রাখার সঙ্কল্প করেন।

আশুরার রোজায় যে গুনাহ মাফ হয়

আশুরার রোজা দ্বারা শুধু সগিরা গুনাহ মাফ হবে। কবিরা গুনাহ বিশেষ তওবা ছাড়া মাফ হয় না। ইমাম নববী (রহ.) বলেন, ‘আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহ মোচন করে। হাদিসের বাণীর মর্ম রুপ হচ্ছে, কবিরা গুনাহ ছাড়া সকল গুনাহ মোচন করে দেয়। এরপর তিনি আরো বলেন, আরাফার রোজা দুই বছরের গুনাহ মাফ করে। আর আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মাফ করে।

শাওয়াল মাসের রোজা রাখার নিয়ম সহকারে বিস্থারিত

মুক্তাদির ‘আমীন’ বলা যদি ফেরেশতাদের আমীন বলার সঙ্গে মিলে যায় তাহলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। উল্লিখিত আমলগুলোর মাধ্যমেও পাপ মোচন হয়। যদি বান্দার সগিরা গুনাহ থাকে তাহলে সগিরা গুনাহ মোচন করে। যদি সগিরা বা কবিরা কোনো গুনাহ না থাকে তাহলে তার আমলনামায় নেকি লেখা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। যদি কবিরা গুনাহ থাকে, সগিরা গুনাহ না থাকে তাহলে কবিরা গুনাহকে কিছুটা হালকা করার আশা করতে পারি।’ (আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খ-৬)

অতএব, আসুন আমরা আশুরার রাতে বেশি বেশি করে নফল নামাজ, তাসবিহ তাহলীলসহ অতিরিক্ত তাওবা ও কৃত কর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে পারি। মহান আল্লাহ যেন আমাদের হায়াত বাড়িয়ে দেয় সে জন্য তার নিকট প্রর্থনা করতে হবে।

আশুরার রোজা কবে

ইসলামের দৃষ্টিতে মহররম একটি বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মাস। অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত আছে এ মাস ঘিরে। এ মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বের তাৎপর্যপূর্ণ সেই আশুরার দিন। এ দিনের সর্বাপেক্ষা আলোড়িত ও আলোচিত বিষয় হলো কারবালার মর্মান্তিক ইতিহাস। আশুরার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় ঘটনার শীর্ষে স্থান পায় মুসা (আ.)-এর একটি ঘটনা। এই দিনে তিনি অত্যাচারী শাসক ফিরাউনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।

এ ঘটনার বিবরণে ইমাম বুখারি (রহ.) সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা পালন করতে দেখেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করেন, এই দিনে কী ঘটেছে যে তোমরা এতে রোজা পালন করো? তারা বলে, এই দিনটি অনেক বড় দিন, এই দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ফিরাউন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফিরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।

এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। ইহুদিদের জবাব শুনে রাসুলে করিম (সা.) বলেন, মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে বেশি যত্নশীল হওয়ার অধিকারী। অতঃপর তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখেন এবং মুসলমানদের তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৭, মুসলিম, হাদিস : ১১৩৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) এই রোজা নিজে পালন করেছেন এবং উম্মতকে রাখার প্রতি নির্দেশ করেছেন, তাই তাঁর অনুসরণ করা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া অসংখ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজার ফজিলত বর্ণনা করেছেন। কয়েকটি নিম্নে উপস্থান করা হলো—

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা মহররম মাসে আশুরার রোজা।’ (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৮৪২১০)

আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া সহ রোজা সম্পর্কিত সকল বিষয়

মুসলিম শরিফে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, বিধর্মীরা তো এই দিনটিকে বড় দিন মনে করে। এই দিনে তারাও রোজা পালন করে। আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি তাহলে তো এদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের জবাবে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন (তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে), আগত বছর ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব, ইনশাআল্লাহ। (মুসলিম, হাদিস : ১১৩৪)

অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরো একটি রোজা রেখে নিয়ো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২১৫৪)

উপরোক্ত হাদিসগুলোর আলোকে প্রমাণিত হয় যে আশুরার রোজা হবে দুটি—মহররমের ১০ তারিখ একটি, আর ৯ তারিখ অথবা ১১ তারিখ আরো একটি।

আশুরার রোজা কয়টি

ইসলামি ইতিহাসে হিজরি বর্ষের প্রথম মাস মুহররমের দশ তারিখকে আশুরার দিন বলা হয়। ৬১ হিজরি সালের এ দিনে মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রা.) কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। তা ছাড়া, ইসলামপূর্ব যুগের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও এই দিনে ঘটেছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা হলো-আশুরার দিনে হজরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল হয়। হজরত নুহ (আ.) মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পান, হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান, মুসা (আ.)-কে তাড়া করতে গিয়ে ফেরাউন নদীতে ডুবে মারা যায় এবং হজরত ঈসা (আ.) এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন।

আশুরার দিনে রোজা রাখায় বড় ফজিলত রয়েছে। স্বয়ং রাসুল (সা.) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এ দিনে রোজা রেখেছেন এবং সবাইকে এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, সাহাবি হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন-মহানবী (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজার পর সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।

আশুরার রোজার নিয়ত,

আশুরার রোজা মূলত ১০ মুহররমের রোজা হলেও এই দিনের সঙ্গে মিলিয়ে আরও একটি রোজা রাখার ব্যাপারে হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন-

তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখ এবং তাতে ইহুদিদের বিরোধিতা করো। আশুরার আগে একদিন বা পরে একদিন রোযা রাখ। (সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস নং ২০৯৫) ।

এজন্য ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ দুদিন রোজা রাখা উত্তম। অবশ্য কেউ যদি শুধু ১০ মুহররম রোজা রাখে তবে সেটিও আশুরার রোজা হিসেবেই গণ্য হবে।

আশুরার রোজার ফজিলত

মহররম মাস ত্যাগ ও আদর্শের সেই বার্তায় স্মরণ করিয়ে দেয়; যা প্রত্যেক মুমিন মুসলমান হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। পবিত্র এ মাস আলোকিত হয়েছে আশুরায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বকরতপূর্ণ সিয়াম সাধনায়। হাদিসে এসেছে-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রোজা হল আল্লাহর মাস মহররমের রোজা।’

হাদিসে বর্ণিত মহররমের রোজাটি মূলত ১০ মহররম তথা আশুরার রোজা। মহররমের মর্যাদা ও বরকতের উৎসও এদিন রোজা রাখা।

২. হজরত আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় আছে আশুরার রোজা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন- আশুরার রোজা বিগত বছরের পাপসমূহ মোচন করে দেয়।’

আশুরার রোজা সব নবি-রাসুলের আমলেই ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসেও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পেলেন, ইয়াহুদিরা এই দিনে রোজা রাখছে। তিনি রোজা রাখার কারণ জানলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকে বললেন, ‘মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ইয়াহুদিদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য। সুতরাং তোমরাও আশুরায় রোজা রাখ। তবে তাদের অনুকরণ বা সাদৃশ্য যেন না হয় সে জন্য তিনি আগের কিংবা পরের ১ দিন রোজা পালনের কথাও বলেছেন।

?? গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন ??

দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসে রোজা ফরজ হওয়ার আগ পর্যন্ত আশুরার রোজা ছিল বাধ্যতামূলক। রমাজনের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজা রাখার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতিত অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম বলে ঘোষিত হয়েছে হাদিসে।

আশুরায় ২টি রোজা রাখা সুন্নাত

আশুরা উপলক্ষ্যে দুইটি রোজা রাখা সুন্নত। রোজা রাখার পদ্ধতি হল- মহররমের ৯-১০ কিংবা ১০-১১ তারিখ রোজা রাখা। এ রোজা রাখলে পুরো এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন বলে আশাবাদী ছিলেন বিশ্বনবি। হাদিসে এসেছে-

হজরত কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, আল্লাহ তাআলা এর অছিলায় বিগত জীবনের এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)

আশুরায় ছোট বাচ্চাদের রোজা

হজরত রুবাইয়্যেই’ বিনতে মুআ’ওয়েয রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আশুরার দিন সকালে আনসারি সাহাবাগণের গ্রামগুলোতে দূত পাঠিয়ে (এ রকম) ঘোষণা দিতে বলেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে কিছু খেয়ে ফেলেছে সে যেন বাকি দিন না খেয়ে পূর্ণ করে। আর যে ব্যক্তি না খেয়ে আছে সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে। তিনি (রুবাইয়্যেই’) বলেন, ‘এরপর আমরা নিজেরা রোজা রাখতাম এবং আমাদের বাচ্চাদেরকেও রোজা রাখাতাম। আর তাদেরকে তুলা দ্বারা বানানো খেলনা দিতাম। যখন তাদের কেউ খানার জন্য কাঁদত তখন ইফতারি পর্যন্ত ঐ খেলনা দিয়ে রাখতাম।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, ‘আমরা বাচ্চাদের জন্য তুলা দ্বারা খেলনা বানাতাম এবং আমাদের সাথে রাখতাম। যখন তারা খানা চাইত তখন তাদেরকে খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখতাম; যাতে করে তারা তাদের রোজা পূর্ণ করে।

মহররম মাসে আশুরার দিনের আমল

আশুরার দিন রোজা রাখা মহররমের অন্যতম আমল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী আশুরায় নয় বরং মহররম মাসে আমল করার কথা বলেছেন। আর আশুরায় রোজা রাখার পাশাপাশি তাওবাহ-ইসেতেগফার ও দান সাদকার কথাও বলেছেন। তাছাড়া মহররম মাসজুড়ে বেশি বেশি নফল রোজা ও তাওবাহ-ইসতিগফারের প্রতি সবাইকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই মাসব্যাপী আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত আবশ্যক। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি রমজানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তবে মুহররমে রোজা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেন। ভবিষ্যতেও আরও অনেক মানুষের তাওবা কবুল করবেন।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ)

তাওবা ও ইসতেগফারের জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো কুরআন-হাদিসে বর্ণিত ইসতেগফার বিষয়ক দোয়াগুলো বুঝে বুঝে পড়া। এ দোয়াগুলোর মাধ্যমে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন।

>মাসজুড়ে দোয়ার আমল

মাসজুড়ে তাওবাহ-ইসতেগফার বছরব্যাপী কল্যাণ লাভে এ দোয়া পড়া আবশ্যক। তাহলো-

اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ ، وَالإِيمَانِ ، وَالسَّلامَةِ ، وَالإِسْلامِ ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালঅমাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি, ওয়া ঝাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি।’ (আল-মুঝাম আল আওসাত)

> বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা

رَبَّنَا ظَلَمْنَاۤ اَنْفُسَنَا، وَ اِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَ تَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ

উচ্চারণ: রাব্বানা জ্বালামনা আংফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ২৩)

অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’

> সব সময় ইসতেগফার পড়া

أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ

উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর।

> সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া-

أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আশুরার রোজা পালন ও আমলসহ মাসব্যাপী দোয়া ও তাওবাহ ইসতেগফারে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন।

আরও আপনার জন্য-

রিযিকের মালিক আল্লাহ

অর্থ বুঝে নামাজ পড়ি

আত্মীয়তার সম্পর্ক

সালামের ফযিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

আজান অর্থ কি? আজানের জবাব এবং ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত

আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি? আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত সহ বিস্তারিত

আসতাগফিরুল্লাহ দোয়া-ক্ষমা প্রার্থনার নিয়ম ও ৫ দোয়া

মোনাজাতের দোয়া বাংলা উচ্চারণ । দোয়া কবুলের আমল-রিজিক বৃদ্ধির দোয়া-আয়না দেখার দোয়া

তওবাতুন নাসুহা, সঠিক পথে আসুন

SS IT BARI– ভালোবাসার টেক ব্লগের যেকোন ধরনের তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আপডেট পেতে আমাদের মেইল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!

Join ৪৯১ other subscribers

প্রতিদিন আপডেট পেতে আমাদের নিচের দেয়া এই লিংক এ যুক্ত থাকুন

SS IT BARI- ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিয়ে প্রযুক্তি বিষয়ক যেকোনো প্রশ্ন করুনঃ এখানে ক্লিক করুন

SS IT BARI- ফেসবুক পেইজ লাইক করে সাথে থাকুনঃ এই পেজ ভিজিট করুন
SS IT BARI- ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে এএখানে ক্লিক করুন এবং দারুণ সব ভিডিও দেখুন।
গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন।
SS IT BARI-সাইটে বিজ্ঞাপন দিতে চাইলে যোগাযোগ করুন এই লিংকে

স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কিত ইংলিশে সকল সঠিক তথ্য জানতে আমাদের SS IT BARI- ভালোবাসার টেক ব্লকের আরেকটি সংস্করণ, US IT BARI- All About Healthy Foods ওয়েব সাইট টি ভিজিট করতে পারেন।
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন –www.usitbari.com

WhatsApp Image 2022 02 01 at 9.56.07 AM

SS IT BARI- ভালবাসার টেক ব্লগ টিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *