আজানের জবাব-আজান এই শব্দ টা সবার কাছে পরিচিত। যেহেতু আমরা মুসলমান জাতি এইজন্য আযানের জবাব এবং আযান সম্পর্কিত সকল কিছু আমাদের জানা খুবই জরুরী।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় আমরা মুসলমান জাতি হওয়া সত্বেও বিভিন্ন রকম ইসলামের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো জানা নেই।তাই আজকে আমি আপনাদেরকে আজান অর্থ কি এবং আযানের জবাব দেওয়া সম্পর্কিত সকল তথ্য জানানোর চেষ্টা করব ইসলামের আলোকে ইনশাল্লাহ।
আজান অর্থ কি
আজান অর্থ নামাজের জন্য আহবান করা।মসজিদের মিনার থেকে মোয়াজ্জেমের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় আজানের এই সুমধুর সুর, আযান শোনার পর এর জবাব দেওয়া রয়েছে উপকারিতা এবং বিভিন্ন সাওয়াব।
আমাদের হাদীস গ্রন্থে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সুস্পষ্টভাবে অনেকবার এই আযান সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি? আলহামদুলিল্লাহ বলার ফজিলত সহ বিস্তারিত
আজান হচ্ছে সৃষ্টির প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা প্রতি আহ্বান। একজন মানুষকে যখন তার মহান মালিকের প্রতি আহ্বান হয় তা উপলব্ধি তখন কেমন হতে পারে? তাই আযানের আওয়াজ শুধু মুসলমানের অন্তরে না এটি অমুসলিমের অন্তরেও আকর্ষণ করে।
আযানের জবাব দেওয়া কি সুন্নত?
হ্যাঁ একজন মুসলমানের জন্য আযানের জবাব দেওয়ার বা উত্তর দেওয়া সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন -যখন তোমরা আজান শুনবে এর জবাবে মোয়াজ্জেমের অনুরূপ তোমরাও বলবে (বুখারি হাদিস 611)।
আযানের জবাব দেওয়ার সঠিক নিয়ম
আযান শোনার পরবর্তী সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যারা আযানের জবাব দেওয়ার পর আল্লাহর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা বা দোয়া করেন, আল্লাহ তাআলা সেই বান্দার সেই চাওয়া পূরণ করে দেন। আবার যথাযথভাবে আযানের জবাব দেওয়া রয়েছে চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাতের ঘোষণা ও।
- হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কেউ যদি মোয়াজ্জেমের আযানের “আল্লাহু আকবার” আল্লাহু আকবার “শুনতে পাও তার জবাবে আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলবে।
- আবার যখন মোয়াজ্জেমের মুখে “আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এটার জবাবে আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে।
- আবার মোয়াজ্জেম যখন” আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ এর জবাবে আপনি অশাহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ বলবেন।
- আবার মোয়াজ্জেম যখন “হাইয়া আলাস সালাহ “এই কথাটি বলবে, তখন তার জবাবে আপনি “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ “বলবেন।
- এরপরে মোয়াজ্জেম যখন তার আজানে “হাইয়া আলাল ফালা” এই কথাটি বলবে তার জবাবে আপনি না হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলবেন।
- আবার মোয়াজ্জেম যখন “আল্লাহু আকবার “আল্লাহু আকবার” বলবে এই জবাবে আপনি “আল্লাহু আকবার” আল্লাহু আকবার “বলবেন।
- এবং মোয়াজ্জেম যখন আযানের “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে, তখন তার জবাবে আপনি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবেন” তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে (আবু দাউদ মুসলিম)
মোট কথা হচ্ছে, আযানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি হলো, মোয়াজ্জেম প্রত্যকটি আযানের বাক্য বলে থামার পর, শ্রোতা ওই বাক্যটি নিজেও অনুরূপভাবে বলবে। কিন্তু মোয়াজ্জেম যখন “হাইয়া আলাস সালাহ” হাইয়া আলাল ফালা “বলবে তখন শ্রোতা লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলবে এটাই বিশুদ্ধ অভিমত।
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়া-ক্ষমা প্রার্থনার নিয়ম ও ৫ দোয়া
তবে কোন কোন কিতাবে বা হাদিসে “হাইয়া আলাস সালাহ” হাইয়া আলাল ফালা” বলার সময় মোয়াজ্জেমের অনুরূপ বলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে( কিতাবুল দোয়া তাবারানী হাদিস 858)
ফজরের আযানের সময় আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম এর জবাবে কি বলবেন?
ফজরের আযানের সময় “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম এর পরিবর্তে আপনি মোয়াজ্জেমের অনুরূপ বলতে পারবেন বিভিন্ন রকম হাদীসে এ কথাটি এসেছে।
আযানের জবাবের কিছু সচরাচর ভুল
অনেকে আমরা আযানের জবাব দেওয়ার সময় কিছু সচরাচর ভুল করে থাকি যেমন- কেউ কেউ আজানে “আল্লাহু আকবার”মোয়াজ্জেম বলার পর উত্তরে জাল্লাল্লাহ জাল্লাল্লাহ পড়ে থাকি, এটি সুন্নাহ-পরিপন্থী (ইমদাদুল আকরাম 1/ 416)।
?? গুগল নিউজে SS IT BARI সাইট ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন তারপর ফলো করুন ??
আবার অনেকেই আজানের সময় জবাব দিতে গিয়ে “অশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” এর জবাবে “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “বলে থাকি এটি উচিত নয়। কেননা এ সময় দরুদ পড়ার নির্দেশনা কোথাও নেই বরং তখনো মোয়াজ্জেমের অনুরূপ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সুন্নত।
আবার অনেকেই আমাদের দেশে আজানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় অনেকে বুড়ো আঙুল চুম্বন করে এবং চোখ মুছে। তাদের কেউ কেউ ‘কুররাত আইনী’-তেও দো‘আ পাঠ করেন। কিন্তু ইসলামী শরীয়তে এর কোন প্রমাণ নেই। তাই এটি বাতিল করা হয়। (আল-মাকাসিদুল হাসানা, পৃষ্ঠা 606, ইমদাদুল ফাতাওয়া: 5/259)।
দোয়া কবুলের আমল-রিজিক বৃদ্ধির দোয়া-আয়না দেখার দোয়া
আশা করছি উপরের বিষয় থেকে আমি আপনাদেরকে আযানের জবাব দেওয়া সম্পর্কে সবকিছু হাদিস ও কোরআন থেকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।
আযানের জবাব সম্পর্কিত কিছু হাদিস
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- আযান ও ইকামতের মাঝে যে দোয়া করা হয় তা ফেরত দেওয়া হয়না( মুসনাদে আহমদ আবু দাউদ)
– হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মুয়াজ্জিনদের মর্যাদা আমাদের চেয়ে বেশি হবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মুয়াজ্জিন যা বলে তাই বল। অতঃপর নামাযের আযান শেষ হলে (আল্লাহর কাছে) প্রার্থনা কর। (অতঃপর) যা চাইবে তাই দেওয়া হবে। (আবু দাউদ, মেশকাত)
কদরের নামাজের নিয়ম-লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও ফজিলত
– অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের সাথে নামাযের আযানের কথা বলবে সে জান্নাতে যাবে।” (আবু দাউদ, মেশকাত)
আযানের জবাব কাদের না দিলেও হবে?
নামায পড়া, খাওয়া-দাওয়া, ইস্তিঞ্জাকারী, স্ত্রী সহবাস, মহিলাদের ঋতুস্রাব ইত্যাদি।তবে অনেক আলেমের মতে নামাযের আযানের পরপরই কাজ থেকে অবসর নিলে আযানে সাড়া দেওয়া উত্তম। অবিলম্বে প্রার্থনা. সাময়িকভাবে কোরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে নামাজের আযানের জবাব দেওয়া উত্তম। (আদ্দুররুল মুখতার : ১/৩৯৮)।
আজানের জবাব জুমার দ্বিতীয় আজানে কি দেয়া লাগবে?
জুমার দ্বিতীয় আযানের সময় খতীব সাহেব মিম্বরে বসে থাকলে ফকীহদের নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী জুমু’আর দ্বিতীয় আযানের মৌখিক জবাব না দেওয়াই উত্তম।(আদ্দুররুল মুখতার: 1/299, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া: 2/56)।
আজানের সময় দুনিয়াবি কথা বলা ও কোন কাজে লিপ্ত থাকা যাবে কি?
আযানের সময় চুপ থাকা সুন্নাত। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে সাধারণ ধর্মীয় ও পার্থিব কথাবার্তা বা কাজে লিপ্ত হওয়া অনুচিত। বক্তৃতা বা সেমিনারের সময় আযান সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। ওয়াজ বা যেকোনো দ্বিনী মাহফিলের সময়ও সাময়িকভাবে বন্ধ রেখে সবাইকে আজান শোনা উত্তম।
আজানের জবাব রেডিও-টেলিভিশনে শুনলে কি দিতে হবে?
মুয়াজ্জিনের আজান রেডিও ও টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হলে তাতে সাড়া দেওয়া সুন্নাত। লিপিবদ্ধ হলে উত্তর দেওয়া সুন্নত নয়। (বাদায়েউস সানায়েঃ ১/৮৪৮, আপকে মাসায়েল অর উনকা হলঃ ১/১৬০)।
আজানের পর কি দোয়া পরতে হয়?
আযানের পর দরুদ শরীফ ও দো‘আ পাঠ করা সুন্নাত। হাদীস শরীফে এর ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ, আযানের পর যে ব্যক্তি এই দুআ পাঠ করবে তার জন্য পরকালে আমার সুপারিশ অনিবার্য। (বুখারি, হাদিস : ৬১৪)।
ইনশাআল্লাহ বলার ফজিলত I ইনশাআল্লাহ অর্থ কি?
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব
ফজরের নামাজ কয় রাকাত? ফজরের নামাজের শেষ সময়
সর্বশেষ প্রযুক্তি বিষয়ক তথ্য সরাসরি আপনার ইমেইলে পেতে ফ্রি সাবস্ক্রাইব করুন!
”তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক লেখালিখি করি। এর আগে বিভিন্ন পোর্টালের সাথে যুক্ত থাকলেও, SS IT BARI-আমার হাতেখড়ি। তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিশ্লেষণ বাংলায় জানতে ভিজিট করুন http://ssitbari.com